জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না, সেটা থাকবো না”প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


rafiq প্রকাশের সময় : জুন ২২, ২০২২, ১৬:৪৬ / ২৯৭
জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না, সেটা থাকবো না”প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিডি সংবাদ ৭১ ডেস্ক ঃ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি দল নির্বাচনে অংশ নিতে আর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে হলে দেখাতে হবে যে সেই দল নির্বাচনে জয়ী হলে কে হবে তাদের সরকার প্রধান। বিএনপি যে অংশ নেবে আগামী নির্বাচনে তারা কাকে দেখাবে?

এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন “দলটির নেতৃত্ব কার হাতে এবং কে নেতা? ওরা ইলেকশন করবে কী নিয়ে, পূঁজি কী? বিএনপির কি একটাও যোগ্য নেতা নেই যাকে তারা চেয়ারম্যান করতে পারে”?

“ওদের জন্য কান্নাকাটি করে লাভ নেই। ওরা ইলেকশন করবে কাকে নিয়ে, আমাকে বলতে পারবেন?” পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি।

ঢাকার কাছে মাওয়ায় পদ্মা নদীর উপর নির্মিত সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিলো। তবে এতে চলমান বন্যা পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন তিনি।আগামী শনিবার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প হিসেবে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে।

কংক্রিট ও স্টিলের কাঠামোতে তৈরি দ্বিতল এ সেতুর উপরের অংশ দিয়ে গাড়ি ও নিচতলা দিয়ে রেল চলাচল করবে। সেতুটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি করেছে।অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন যে একজন দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী যাকে তিনি নির্বাহী আদেশে বয়স বিবেচনায় বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছেন, অন্যজন দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত।

আগের দুটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি- এমন অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন যে বিএনপি নিজেই নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছিলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন “তারা যে ইলেকশন করবে কাকে দেখাবে (নেতা হিসেবে)? সাজাপ্রাপ্ত পলাতককে? সে তো এদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে ব্রিটিশ নাগরিক হয়ে বসে আছে। সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ব্রিটিশ নাগরিক কিভাবে হলো? এ নিয়ে তারা কিভাবে ইলেকশন করবে? সেটিই বড় কথা। এখানে গণতন্ত্রের দোষ কোথায়”।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে সামরিক একনায়কদের হাতে একই কায়দায় প্রতিষ্ঠিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর বাইরে বাম দলগুলো ক্ষুদ্র হতে হতে বর্তমান অবস্থায়এসে দাঁড়িয়েছে।

“তাহলে আর আছে কে? ভালো শক্তিশালী দল দেন। মাঠেই দেখা হবে-জনগণ যাকে চায়। আমি তো সুযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তো হতে চাইনি কখনো। জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না, সেটা থাকবো না”।
পদ্মা সেতু: উপদেষ্টা প্যানেল সাহস দেখিয়েছিলো
পদ্মা সেতু শনিবার উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন যে দেশেরই কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি এ সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলো।

“এই ষড়যন্ত্রে কে বা কারা ছিলো তা বহুবার বলেছি। ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের কারণেই আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নাম রটানো হয়েছিলো। দেশের কিছু নাগরিক ও বিশেষ একজন নাগরিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ব্যাংকের সামান্য একটা এমডি পদ এতো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে তা জানা ছিলো না,” এমন মন্তব্য করেন তিনি। তবে কারও নাম তিনি উল্লেখ করেননি।

শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় প্রয়াত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা প্যানেল সাহস দেখিয়েছিলো বলেই নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।

“২৫ তারিখ সেতু উদ্বোধন করবো। তাদের সাহসের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে,” বলছিলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, উৎসব সবাই করবো। কিন্তু নিয়ম মানতে হবে, যাতে করে কোন দুর্ঘটনা যেন না ঘটে।
সম্প্রতি বিরোধীদের পক্ষ থেকে সেতু নিয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করা ও দুর্নীতির যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সেদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সেতুর গুনগত মানে কোন আপোষ করা হয়নি এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণে এটি নির্মিত হয়েছে।

সেতু নির্মাণে সমর্থনের জন্য দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কাজের মান নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারবে না। যারা সমালোচনা করেছে তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“সব ষড়যন্ত্র-প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে সেতু নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে তারা আমার পাশে ছিলেন। তাদের সহযোগিতার জন্যই আজ পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে”।

বন্যায় সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছি
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই শেখ হাসিনা সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ও তা মোকাবেলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপের বর্ণনা দেন।

অস্বাভাবিক বন্যা মোকাবেলার সক্ষমতা সরকারের আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভৌগলিক কারণেই বাংলাদেশের মানুষকে বন্যার সাথে বসবাস করতে হবে এবং সেটা মেনে নিতে হবে।

এভাবেই অবকাঠামোসহ সব কিছু নির্মাণ করতে হবে ও বন্যার জন্য তৈরি থাকতে হবে বলে তিনি মনে করেন।দুর্যোগ ঠেকানো যায় না, কিন্তু ক্ষতি যেন কম হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। সিলেটে এতো বেশি বন্যা ১২২ বছরে দেখেনি ওরা। সবচেয়ে ভয়াবহ এই বন্যা মোকাবেলায় সব ব্যবস্থা নিয়েছি। সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে,” বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি বিশেষ করে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর মেরামতের বিষয়ে তার সরকার সজাগ আছে এবং এজন্য বিশেষ বরাদ্দ সব জেলা উপজেলায় দেয়া হয়েছে।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে কৃষিতে পুনর্বাসন ও কৃষি কাজ শুরুর প্রস্তুতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা আছি সবসময় তাদের পাশে, সাধ্যমত চেষ্টা করবো যাতে তাদের কষ্ট না হয়”।
বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সাধারণত বন্যার ঝুঁকি থাকে বলে তার জন্যও আগাম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র বিবিসি  বাংলা।

 

ব্রেকিং নিউজ :
Shares