একজন আত্মভোলা, উচ্চাভিলাষী, সরলমনা, পশু ও বৃক্ষপ্রেমী, পরোপকারী ডাঃ এহছানুল হক চৌধুরীর একগুচ্ছ স্বপ্নের অকালমৃত্যু ঘটল,


rafiq প্রকাশের সময় : মার্চ ১১, ২০২৪, ১২:৪৫ /
একজন আত্মভোলা, উচ্চাভিলাষী, সরলমনা, পশু ও বৃক্ষপ্রেমী, পরোপকারী ডাঃ এহছানুল হক চৌধুরীর একগুচ্ছ স্বপ্নের অকালমৃত্যু ঘটল,

একজন বৃক্ষপ্রেমী ও সফল ভেটেরিনারী চিকিৎসক   এহছানুল হক চৌধুরীর একগুচ্ছ স্বপ্নের মৃত্যু,

মুফিজুল হক চৌধুরী- বিশেষ প্রতিনিধি বিডি সংবাদ ৭১ ডাঃ এহছানুল হক চৌধুরী ৷ তিনি মানুষের চিকিৎসক নন, কিন্তু গবাদি পশু-পাখির একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক ছিলেন ৷সেই সূত্রে তিনি ডাঃ এহছান হিসাবে এলাকায় অতি পরিচিত এক নাম ৷ তিনি একাধারে একজন সফল চিকিৎসক, আদর্শ খামারী, বৃক্ষপ্রেমী ও সফল একজন সংগঠক ছিলেন ৷

বাল্যকাল থেকে তিনি খুবই মেধাবী, বাকপটু, ও সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন ৷ পারিবারিক দৈন্যতা, সাংসারিক টানাপোড়নে পড়ে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডী পেরোতে না পারলে ও দমিবার পাত্র ছিলেন না ৷প্রখর বুদ্ধিমান এই তরুন প্রথম জীবনে ব্যবসায়ী হতে চেয়েছিলেন ৷চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, রেয়াজুদ্দিন বাজারে ডি ও এর ব্রোকারি সহ নানাবিধ চেষ্টা করে ও পুঁজির স্বল্পতার কারণে সুবিধা করতে পারেন নি ৷
গ্রামে ফিরে এসে গবাদি পশুর খামার করার চেষ্টা করলেন ।১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজস্ব ডেইরি ফার্ম ।পরে তিনি চিটাগাং ডেইরি ফার্ম এন্ড পোল্ট্রি ফার্ম এসোসিয়েশন এর সদস্য মনোনিত হন । এটা করতে গিয়ে দেখেন দেশে গবাদি পশু-পাখির উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই ৷ফলে পশু-পাখি নানা রোগ ব্যাধিতে যত্রতত্র একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে ৷এই বিষয়টা তাঁর হৃদয়কে ব্যথিত করে তুলল ৷শুরু হলো পশু চিকিৎসক হ’বার সংগ্রাম ।
তিনি পশু চিকিৎসা ও হাঁস মুরগি পালনের উপর অনেক প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন, ১৯৯৩ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হ’তে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন ৷প্রশিক্ষণ নেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী বিশ্ব বিদ্যালয়ে ।অল্প দিনেই সেখানকার শিক্ষার্থি, শিক্ষক ও টেকনেশিয়ানদের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেন ৷পরে তিনি কৃত্রিম প্রজনন প্রশিক্ষণ ও গ্রহন করেন এবং এর অংশ হিসাবে জিরি গ্রামে একটি বেসরকারী কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট স্থাপন করেন৷
১৯৯৪ সালে দ্বিতীয় মৎস্য চাষ প্রকল্পের কারিগরি সহযোগিতায় প্রতি হেক্টরে ৪৭১০ কে জি কার্প জাতীয় মাছ উৎপাদনে তিনি সাফল্য পান ৷এরপর তিনি নিজেকে সবুজ বনায়নের দিকে নিয়োজিত করেন ৷৯৫-৯৬ অর্থবছরে চেয়ারম্যান ৭নং জিরি ইউপি ও পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক সহযোগিতায় বনায়ন প্রকল্পে হাত দেন ।তিনি জিরি গ্রামে দুই কিলোমিটার রাস্তার উভয় পাশ্বে গাছের চারা লাগিয়ে সবুজ বনায়ন সৃষ্টি করেন , এজন্য তিনি অনেক সেক্টরে প্রশংসিত ও হয়েছেন ৷বর্তমানে গাছগুলো বড় বড় বৃক্ষে শোভা পাচ্ছে ৷
বিভিন্ন সময়ে তিনি আই এফ ডিসি থেকে বিজনেস প্লান্টের উপর এগ্রিকালচার রিচার্স ইনস্টিটিউট, পাহাড়তলী থেকে জাম-প্লাজম সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন ৷তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞানী ডাঃ ওয়াহাবের তত্ত্বাবধানে ফিস রিচার্স ইনস্টিটিউট থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন ৷
তিনি ২০০৯ সালে ইউনরক ইন্টারন্যাশনাল নামের একটা বিদেশী সংগঠনের সাথে নীচু ভূমিতে গলদা চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ, পোনা উৎপাদন, বিপনণ, নার্সারি স্থাপনের উপর কাজ করেন ৷২০১১ সালে মৎস্যচাষ ও চিংড়ি চাষ প্রযুক্তির উপর দি নেটওয়ার্ক অব এ্যাকুয়া কালচার সেন্টারস ইন এশিয়া পেসিফিক-থাইল্যান্ড থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন ৷এছাড়া পটিয়া উপজেলা যুবউন্নয়ন অধিদপ্তর কতৃক শ্রেষ্ঠ আত্মকর্মী নির্বাচিত হন এবং উপজেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষী পুরষ্কার লাভ করেন ।তাছাড়া তিনি বাংলাদেশ সরকারের ব্রিড আপড্রেডেশন থ্রু প্রজোনী টেস্ট প্রকল্প প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম এনিম্যাল সায়েন্ট বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে প্রযুক্তিতে প্রথম পুরস্কার লাভ করেন ৷ তিনি গুরুতর অসুস্থ হবার আগ পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রাম প্রাণীসম্পদ এ আই টেকনেশিয়ান কল্যান সমিতির সভাপতি ছিলেন ৷
বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী, নিরলস পরিশ্রমী, ডাঃ এহছানুল হকের নানা রকম প্রজেক্ট দেখে মানুষ মুগ্ধ হতো, প্রশংসা করতো৷ তিনি তাঁর উৎপাদিত মৎস্য ,ফলমুল ,শাকসব্জী সাধারণ মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বিলিয়ে দিয়ে আনন্দ পেতেন ।সংসারের প্রতি ছিলেন বরাবরই উদাসীন ৷ আত্মভোলা, পরোপকারী এই মানুষটা রাত দিন নিজের স্বপ্ন নিয়ে বিভোর থাকতেন ,স্বপ্ন দেখতেন পশুখাদ্য, দুগ্ধ, মাছ ফলমুল, শাক-সব্জিতে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ন হয়ে উঠবে ।পুঁজির স্বল্পতা,বেহিসাবী চালচলন, অপরিসীম সরলতা, নিজের আয়ত্বের বাইরে পদক্ষেপ নেওয়া, একসাথে অনেকগুলো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার মানসিকতা তাঁকে একেবারে পথে বসিয়ে দিয়েছে ৷আজ তাঁহার সাধের ফার্ম, মৎস্য প্রকল্প, সবুজ বনায়ন কোন কিছুরই অস্থিত্ব নেই ৷নেই কোন প্রকল্পে এক পয়সা মালিকানা ৷নিঃস্ব ,রিক্ত,জীবনযুদ্ধে এক পরাজিত সৈনিক ৷
অনিবার্য ফলশ্রুতিতে সর্বস্ব হারিয়ে হৃদয়ের নিদারুন হাহাকার নিয়ে বিগত দুই বছর আগে পর পর দু’বার ব্রেইন স্ট্রোক করে সম্পূর্ণ নির্বাক এক রোগী হয়ে গৃহবন্দী আছেন ৷কারো সাথে কোন প্রকার বাক্যালাপ করেন না ৷শুধু কবি নজরুলের ন্যায় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ৷অনেক চিকিৎসা শশ্রুসা করে ও পুরাপুরি  সুস্থ হতে পারেননি একজন অতিশ্রীপর বৃদ্ধার ন্যায় জবু-থবু হয়ে শোয়া বসায় তাঁর দিন কাটে ৷তাঁর অপূর্ণ স্বপ্ন, তাঁর এই হতাশা ব্যর্থতায় পরিবার পরিজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ও ব্যথিত ৷ তিনি যে একগুচ্ছ স্বপ্ন দেখতেন দেশকে নিয়ে, তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি ৷

একজন আত্মভোলা, উচ্চাভিলাষী, সরলমনা, পশু ও বৃক্ষপ্রেমী, পরোপকারী ডাঃ এহছানুল হক চৌধুরীর একগুচ্ছ স্বপ্নের অকালমৃত্যু ঘটল,তিনি সবার কাছে দোয়া চান মহান রব যেন তাঁকে দ্রুত সুস্থ  করে তুলেন।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares