“বাংলা প্রবাদে নারী ” মফিজুল হক চৌধুরী-বিডি সংবাদ একাত্তর,


rafiq প্রকাশের সময় : অগাস্ট ২০, ২০২২, ২৩:৫৬ / ৩৭৫
“বাংলা প্রবাদে নারী ” মফিজুল হক চৌধুরী-বিডি সংবাদ একাত্তর,

“বাংলা প্রবাদে নারী ”
………..মফিজুল হক চৌধুরী
বিডি  সংবাদ ৭১ ডেস্ক ঃ প্রবাদ হচ্ছে প্রচলিত কথা ,যাহা বহুকালের অভিজ্ঞতালব্ধ কোন ঘটনা বিবরণের সংক্ষিপ্ত রূপ ৷ হাজার বছর আগে ও প্রবাদের ব্যবহার ছিল ৷’খনার বচন’, ‘ডাকের কথা’, থেকে শুরু করে ‘চর্যাপদ’, ‘চণ্ডীমঙ্গল ‘, ‘অন্নদা মঙ্গল’, ‘রামায়ন-মহাভারতে ‘ ও প্রবাদের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় ৷মানুষের জীবনের অসংখ্য বিষয় নিয়ে প্রবাদ রচিত হয়েছে ৷

এ সবের মধ্যে “নারী ” একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ যুগে যুগে নারীর অবস্থান, সমাজ বা সংসারে মানুষের জীবনধারায় নারীর মুল্যায়ন, এককথায় বহুকাল আগ থেকে নারীর যে ভাবমুর্তি, নারীর প্রতি পুরুষ তথা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির সামগ্রীক এক চিত্র পাওয়া যায় আমাদের বাংলা প্রবাদে ৷
নারী সম্বন্ধে তাঁর রূপ ও গুণের কথাই সর্বাগ্রে আলোচিত হয় ৷ তাই বলা হয়-“রূপে লক্ষী, গুণে স্বরস্বতী ,” কেমন দেখতে মেয়ে বিয়ে করতে হবে তার বর্ণনা- “মুক্তাদাঁতী হরিণচোখী লম্বা মাথার চুল, সেই নারী করিলে বিয়ে ঘরে ফোটে ফুল ,” নারীর আচরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে-“স্বামীর সেবা সাঁঝে বাতি, ডাক বলে লক্ষ্মী স্মৃতি ,” যে নারী স্বামীকে অভূক্ত রেখে নিজে খায়, তার সম্পর্কে-” রান্ধিয়া বাড়িয়া যেইবা নারী পতির আগে খায়, সেই নারীর বাড়িতে শীগগীর অলক্ষ্মী হেমায় ৷”
সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে, এরই ভিন্ন প্রকাশ-“নারী গুণে ভাত, নারী গুণে হাভাত ,” নারী যে বলহীন সেটা বোঝাতে-“নারীর বল, চোখের জল,” যে তিন জিনিস থেকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে-“নদী, নারী,শৃঙ্গধারী, এই তিনে না বিশ্বাস করি,” পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে যে সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করা হতো তা ফুটে উঠেছে -“মাটি আর বেটী যার দখলে রয়,তার কথাই কয় ৷”
নারীর মন নাকি দেবতারা ও বোঝেন না, সে কথারই প্রতিধ্বনি শুনি -“নারীমন দেবং নঃ জানন্তি,”কিংবা ” দাসখৎ লিখে পড়ে যদি পায়, তবু ও নারীমন পুরুষে কী পায়?”এভাবে অসংখ্য প্রবাদ, যেমন-“পতির পায়ে মতি,তবে তারে বলে সতী,” “পিয়াঁজ, ধুম্র ,নষ্টনারী, চোখে আনে অশ্রুবারি,”যতই করো শিব সাধনা, কলঙ্কিনী নাম যাবে না,” “পতি হারা নারী, মাঝি ছাড়া তরী,” “রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, নারীর দোষে পুরুষ নষ্ট,” “গৃহিণী লক্ষ্মীরূপিনী, বাম হইলে কালসাপিনী,” “পান হইতে চুন খসেনা, একেই বলে গিন্নিপনা,” “কথায় কথা বাড়ে, জলে বাড়ে ধান, বাপের বাড়িতে থাকলে মেয়ের হয় অপমান,” “স্বামী আমার গুরুজন, একরাজার নয়, সাত রাজার ধন,” “কানার চোখে কানী, রাজার চোখে রাণী,” “অতি বড় গিন্নি না পায় ঘর, অতি বড় সুন্দরী না পায় বর ,” “জাতের মেয়ে কালো ও ভালো, নদীর জল ঘোলা ও ভালো,” “একে তো নাচুনে বুড়ি, তার উপড়ে ঢোলের বাড়ি,”
নারী বিষয়ে প্রবাদ এমনি অসংখ্য হাজারো প্রবাদ প্রচলিত আছে ৷এসব প্রবচনের মাধ্যমে আমরা আবহমান কাল থেকে নারীর প্রতি সামাজিক যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাই, তার অধিকাংশই নেতিবাচক ৷ যেখানে নারী মাত্রই পুরুষের সম্পত্তি, নারী মাত্রই পণ্য, ভোগের সামগ্রী ৷ পদে পদে নারী হয়েছে লাঞ্চিত, অপমানিত, নির্যাতিত ৷ বর্তমান আধুনিক যুগে এসে ও আমরা নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কতটুকু পরিবর্তন করতে পেরেছি, একটু বিবেকের কাছে প্রশ্নটা রাখলাম ৷

ব্রেকিং নিউজ :
Shares