“বর ‘ নামক মধুর শব্দটি বর্বরতার কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাবে কবে?


rafiq প্রকাশের সময় : জুলাই ২, ২০২১, ০০:৩০ / ২৩৩
“বর ‘ নামক মধুর শব্দটি বর্বরতার কলঙ্ক  থেকে মুক্তি পাবে কবে?
  • “বর ”
    মফিজুল হক চৌধুরী,
    বর শব্দ টা বড়ই মধুর, অন্তত যারা নতুন বিয়ে করেছেন কিংবা করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য । অবশ্য বরের আত্মীয় স্বজনরা ও কম পুলকিত নয়, কেননা বরকে ঘিরে তাদের ও হইচই এর কমতি নেই তবে আমার প্রতিপাদ্য বিষয়টা তা না ৷আমার বোধ ও উপলব্দির জায়গা ভিন্ন ৷আমার কেন জানি মনে হয় ‘বর’শব্দটার উৎপত্তি “বর্বর” থেকে, বাংলাদেশ তথা চট্টগ্রামের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে মনে হয় বর শব্দটা বর্বর শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ । বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বরের বাজার দর অনেক উঁচু, যেই বিয়ের পাত্র তথা বরের জন্য কনে দেখা শুরু হল তখন বরকে আর পায় কে ?কোরবানীর গরু দেখার মত একটার পর মেয়ে দেখে যাচ্ছে, আর ডিসকোয়ালিফাই করে যাচ্ছে ,’এটা কালো, ওটা বেটে, এটার চেহারাতে শ্রী কম,ওটার ঠোঁট মোটা, এটার চুল খাটো, ওটা শুকনা, ওটা মোটা, এটার বাপের টাকা পয়সা নাই ইত্যাদি ইত্যাদি ৷আয়নাতে তো নিজের চেহারা কখনো দেখেনি, অনেক দেখাদেখির পর যখন পাত্রী একটা পছন্দ হল, এবার শুরু হল পণ কিংবা দাবী দাওয়ার পালা ।কনের বাপকে বরের জন্য গাড়ি, ফ্রিজ, টি ভি, ফুল ফার্ণিচার, ঘড়ি, পোশাক, আংটি,আক্দ এর ড্রেস, গায়ে হলুদ এর ড্রেস দু’চার পদ স্বর্ণের অলংকার ইত্যাদি দিতে হবে ! সাথে ১০০০/ ২ooo বরযাত্রী খাওয়াতে হবে, অনেক যায়গায় কনে পক্ষ কোন ক্লাবে অনুষ্ঠান করবে, খাবারের মেনু কি কি হবে তা ও বর পক্ষ ঠিক করে দেন !এত কিছুর পর ও খাবারের মেনুতে কনের বাপ চিংড়ি দিতে না পারায় অনেক বিয়েতে মামারামারি হয়েছে, বিয়ে ভেঙ্গে গেছে !নিম্নবিত্তদের ব্যাপার টা আরো জঘন্য, ওরা সরাসরি কনের বাপের কাছে টাকা চেয়ে বসে,ছেলে বেকার তার পর ও কনের বাপের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা চেয়ে বসে | যেন পাত্রীর বাপের বাপের কাছে দাদন লাগাইছে! এ বর্বরতার শেষ কোথায়? এটা তো গেল বিয়ে পুর্ববর্তি বিষয়,পরবর্তি বিষয় আরো জগন্য , বিয়ের পরদিন থেকে পাক ঠ্যাং এর ভাত দাও, হাজতি ছাগল দাও, বেয়াই ভাতা খাওয়াও,কনে ফিরাফিরিতে একগাদা লোককে গলা পর্যন্ত খাওয়াও, আবার বরের বাড়িতে ভাত তরকারি দাও, শবে বরাতে দাও,মোহরমে দাও, আম -কাঁঠাল দাও, তরমুজ বাঙ্গি দাও, রোজায় ইফতারি দাও, ঈদে বরের চৌদ্দগুষ্টিকে কাপড় দাও, কোরবানিতে গরু অথবা ছাগল দাও, মেয়ে বাচ্চা-কাচ্চা হলে দোলনা পোশাক দাও, স্বর্ণের চেইন দাও, সন্তানের আকিকা করলে গরু/ছাগল দাও…এই দাও দাও এর শেষ নাই,তার পর ও শ্বশুর বাড়িতে মেয়ের লাঞ্চনার শেষ নাই ! উঠতে বসতে মেয়েকে বর পক্ষের লোকজন খোটা দেয়- তোমার বাপ জিনিস দিছে অল্প,গরু দিছে ছাগলে মত ইত্যাদি ইত্যাদি…নাদানের জাতের চাহিদার শেষ নাই I
    এদিকে বর পক্ষের ঐসব ডিমান্ড পুরণ করতে গিয়ে মেয়ের বাপের কী অবস্থা তা কি আমি আপনি কখনো ভেবে দেখেছি?এই নির্মমতা এই বর্বতার শেষ কোথায়? একটা মেযের বাপ, বিশ/পঁচিশ বছর একটা মেয়েকে ভরন পোষন,লালন-পালন করে, লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ের উপযুক্ত করা পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ টাকাব্যয় করা ছাড়া রক্ত ঘাম কী পরিমান জডিত ভুক্ত ভোগিও সৃষ্টিকর্তা জানেন ৷ এত কিছুর পর এই পরিস্থিতির উপর দিয়ে যাচ্ছে কনের বাপ! আমরা এখনো আইয়্যামে জাহেলিয়াৎ যুগে বাস করছি | বাইরে ভদ্র লোকের লেবাসে আমরা নর পিশাচরা সমাজে বিচরন করছি, মেয়ের বাপের হৃদয়ের রক্তক্ষরণটা আমাদের কারো চোখে পড়েনা ,আহত সৈনিককে যেমন ব্যনেট দিয়েখুঁচিয়ে’ খুঁচিয়ে মারা হয় আমাদের সমাজে মেয়ের বাপকে তার চেয়েওজঘন্য ভাবে মারা হচ্ছে, এই নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়?কোথায় গিয়ে আমরা থামব?কেউ কি বলে দেবেন?এদেশে মেয়ের বাপ হয়ে জন্ম নেওয়ার মত পাপ মনে হয় এ পৃথিবীতে দ্বিতিয়টি নেই, অথচ আমরা সবাই নির্ধিকার i
    আসুন আমরা সবাই বিষয়টা নিয়ে একটু গভীরভাবে ভাবি, সবাই নুতনভাবে আমাদের আগামীর সমাজটাকে বিনির্মাণ করি,কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাদের এই মহাবিপর্যয় থেকে উদ্বারে এগিয়ে আসি,নইলে আমি আপনি কেউ এই মহাবিপদ থেকে রেহাই পাবো না ৷ হে মহান রব তুমি সকলকে হেদায়াৎ নসীব কর i
    পরিশেষে বলবো ‘বর ‘ নামক মধুর শব্দটিকে আমরা এই বর্বরতা কলন্ক থেকে মুক্তি দান করি I

ব্রেকিং নিউজ :
Shares