আর মাত্র২৪ ঘন্টা পর ভোট উৎসব। রায় দেওয়ার অপেক্ষায় ভোটাররা


rafiq প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৮, ২০১৮, ২৩:৫১ / ২৮৪
আর মাত্র২৪ ঘন্টা পর  ভোট উৎসব। রায় দেওয়ার অপেক্ষায় ভোটাররা

রফিক চৌধুরী———– অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় সারাদেশ। কারা পাচ্ছে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্ব? ক্ষমতাসীন মহাজোট, নাকি তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট? এ প্রশ্নের নিষ্পত্তি করতে আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সবাই অপেক্ষায় সেই ভোট উত্সবের। প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে গাইবান্ধা-৩ আসন বাদে জাতীয় সংসদের ২৯৯টি আসনে কাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এ উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে তত্পর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

নির্বাচনী প্রচারণায় কিছু বিক্ষিপ্ত সহিংসতা হলেও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে ভোটের সার্বিক প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে কমিশন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। অন্যদিকে উদ্বেগ আর উত্কণ্ঠায় রয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

আগামীকালের নির্বাচনকে ভোট উত্সবে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন অবশ্যই উত্সবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। আমরা প্রস্তুত, ভোটররা সবাই উত্সবমুখর এবং আনন্দঘন পরিবেশে ভোটে অংশগ্রহণ করবে, কোনো উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা থাকবে না। সিইসি বলেন, শুক্রবার সকাল ৮টায় প্রচার শেষ হয়েছে। এখন সবাই ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এখন যারা প্রার্থী ও প্রার্থীর সমর্থক, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যার যার অবস্থান থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। কাউকে কোনো রকম কেউ যেন বাধা দিতে না পারে। যার যার ভোট যেন সে দিতে পারে

সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আশ্বস্ত করে সিইসি বলেন, ভোটাররা যাতে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি যেতে পারে, সকলের জন্য নিরাপদ অবস্থা সৃষ্টি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করব। দেশবাসী যারা ভোটার, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সে ব্যবস্থা অবশ্যই করব। গতকাল নির্বাচন ভবনে স্থাপিত ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন’ কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি।

প্রচারণা শেষ হওয়ায় গতকাল ভোটের মাঠ ছিল অনেকটা নীরব। এবারের নির্বাচনে ১৮৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত ৩৯ দলের ১৭৩৩ জন ও স্বতন্ত্র ১৮২ জন রয়েছেন। রাজনৈতিক দল সমর্থিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখন কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিজস্ব পোলিং এজেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিয়ে ব্যস্ত। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের মতে, ভোটে মূল লড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষের মধ্যে।

ভোটগ্রহণ কার্যক্রমকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আজ শনিবার ভোটের সামগ্রী সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পুলিশ পাহারায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন কেন্দ্রের মনোনীত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, সরকারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১৫ লাখ লোক এ ভোট পর্যবেক্ষণ করছে। ফলে নির্বাচনে কোনো শঙ্কা নেই।

ভোটগ্রহণ উপলক্ষে কাল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ব্যাংকও বন্ধ রাখা হয়েছে ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ হয়েছে শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে, এ নিষেধাজ্ঞা বলবত্ থাকবে ৩০ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত। নির্বাচনে কালো টাকার দৌরাত্ম্য বন্ধে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। জনগণের ভোগান্তি কমাতে এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। যানবাহন চলাচলের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কমিশনের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারীর বাইরে কোনো যান চলাচল করবে না।

এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দল অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি অনিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দল প্রধান দুই জোটের সঙ্গী হয়ে নির্বাচনে লড়ছে। এর বাইরে বাম মোর্চা ও ইসলামি কয়েকটি দলের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়িয়েছেন।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের সাধারণ কেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৫ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন থাকবেন। মেট্রোপলিটন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আরও একজন করে বেশি রাখা হবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওর এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরও বেশি থাকবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ সদস্য মোতায়েন: শুধু ভোটকেন্দ্র পাহারায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ ৮ হাজার জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে পুলিশ ১ লাখ ২১ হাজার, আনসার ৪ লাখ ৪৬ হাজার ও গ্রামপুলিশ ৪১ হাজার। এ ছাড়া ৪১৪ প্লাটুন সেনা, ৪৮ প্লাটুন নৌ-বাহিনীর সদস্য, কোস্টগার্ড ৪২ প্লাটুন, বিজিবি ৯৮৩ প্লাটুন ও র্যাব ৬০০ প্লাটুন ভোটের মাঠে রয়েছে। এ ছাড়া স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচন কর্মকর্তা পৌনে ৭ লাখ: দেশের সব সংসদীয় আসনের নির্বাচন শেষ করতে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলায় সমসংখ্যক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুই বিভাগীয় কমিশনার এ দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সহায়তা করতে ৫৮২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনে শুধু ভোটারদের ভোটদানে সহায়তা করার জন্য ৬ লাখ ৬২ হাজার ১১৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার ৪০১৮৩ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন।

১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার: এবার ১ কোটি ২৩ লাখ নতুন ভোটার। নতুন ভোটারসহ মোট ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন।

২৫৯০০ দেশি পর্যবেক্ষক: নির্বাচনে ৮১টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ছাড়া বিদেশিদের মধ্যে ফেমবোসা, ওআইসি, কমনওয়েলথ ও অন্যান্য সংস্থার ৩৮ জন, কূটনীতিক ও বিদেশি মিশনের ৬৪ কর্মকর্তা এবং ঢাকাস্থ দূতাবাস/হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares