কার্ডিয়াক সার্জন থেকে করোনা প্রতারক ডাঃ সাবরিনা ৩ দিনের রিমান্ডে।


rafiq প্রকাশের সময় : জুলাই ১৪, ২০২০, ০৩:১৩ / ৪৬০
কার্ডিয়াক সার্জন থেকে করোনা প্রতারক ডাঃ সাবরিনা ৩ দিনের রিমান্ডে।

বিডি সংবাদ একাত্তর ডেস্ক ============  সাহেদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে স্বামীকে নিয়ে বিভিন্নজনকে হুমকি দিতেন কার্ডিয়াক সার্জন থেকে করোনা প্রতারক

আলোচিত জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গতকাল সোমবার এই রিমান্ডের আদেশ দেন। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারককে হাতজোড় করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডা. সাবরিনা নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন। তিনি বলেন, আমি জেকেজির চেয়ারম্যান না। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়ে পুলিশ। তিনি তারই এক রোগীর নামে নিবন্ধিত একটি মোবাইল সিম ব্যবহার করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। অন্যদিকে রোববার দিবাগত সারারাত তিনি জেগে ছিলেন তেজগাঁও থানার হাজতখানায়। হাজতখানার সামনে একজন নারী প্রহরীর সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা বলেছেন। এছাড়া ভেতরে পায়চারি করেছেন। থানায় নেয়ার পর তাকে কিছুক্ষণ একজন পুলিশ কর্মকর্তার কক্ষে বসানো হয়েছিল। এরপর তাকে হাজতে রাখা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান জানান, অর্থ ও জাল সার্টিফিকেট হাতিয়ে নেবার বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আদালত তার জামিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আসামীপক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেন আদালত।

অভিযোগ পাওয়া যায়, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্নজনকে হুমকি দিতেন সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফ। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহা-পরিচালককেও দেখে নেয়ার হুমকি দেন তার স্বামী আরিফ। স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্টের ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি টেস্টের জন্য জনপ্রতি নিয়েছেন সর্বনিম্ন ৫হাজার টাকা থেকে ৮হাজার টাকা পর্যন্ত। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি তারা নিতেন ১০০ ডলার।

তেজগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন জানান, জেকেজির অফিস থেকে জব্দ করা করোনার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল যে ভুয়া, সেটি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভ (আইদেশি) ল্যাবটি আমাদের জানিয়েছে, জেকেজি যে নমুনার পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছিল, এমন কোনো ফলাফল তারা দেননি। জেকেজি জালিয়াতি করে ভুয়া পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে।

জানা যায়, বিনা মূল্যে পরীক্ষার অনুমতি নিয়ে জাল-জালিয়াতি করছিল জেকেজি। এর পর গ্রেফতার হন আরিফুল হক চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানের আরও চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরী কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে? ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের একটি সূত্র জানান, জেকেজি কতগুলো নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা বেঁধে দেয়নি। ফলে প্রতিদিন অনেক নমুনা তারা পরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছিল। একদিন ৭৮১টি নমুনা পাঠায়। প্রভাবশালীদের আশীর্বাদ থাকায় তারা কেন দ্রুত প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে না, এসব নিয়ে হাঙ্গামাও করত। এ বিষয়ে অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছিল।

ডিএমপির ডিসি হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, এর আগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নামে জালিয়াতির অভিযোগে জেকেজির যেসব সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, সাবরিনাই এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। কাজেই প্রতিষ্ঠানের জাল জালিয়াতির দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ জানান, ওভাল গ্রæপের সিইও আরিফুল চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, করোনার নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতির সঙ্গে আমাদের অফিসের কিছু লোক জড়িত ছিল। যখন আমি এই বিষয়টি জানতে পারি, তখন তাদের আমি টার্মিনেট করেছি। কাকে কাকে টার্মিনেট করেছেন জানতে চাইলে আরিফ বলেন, আমার ওয়াইফ (সাবরিনা আরিফ চৌধুরী), যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, তাকে আমি টার্মিনেট করেছি। আমি তখন বললাম, আপনি (আরিফুল) যদি সিইও হন, তাহলে কীভাবে আপনার ওয়াইফকে টার্মিনেট করবেন। সিইও তো চেয়ারম্যানকে টার্মিনেট করতে পারেন না। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বড় ধরনের প্রতারক বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

সাবরিনার মোবাইল সিম নিবন্ধিত এক রোগীর নামে
জিকেজির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, দীর্ঘদিন ধরে যে ফোন নম্বরটি সাবরিনা ব্যবহার করে আসছেন, তা তার নামে নিবন্ধিত নয়। ওই ফোন কার নামে নিবন্ধন করা জানতে চাইতেই হতভম্ব হয়ে যান বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিভিশন আলোচনায় হাজির হওয়া এই কার্ডিয়াক সার্জান। প্রথমে তিনি বলেন, ওই সিম কার নামে নিবন্ধিত, তা তিনি জানেন না। পরে ব্যক্তিগত গাড়ি চালককে ডেকে এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেন সাবরিনা। গাড়ি চালক অন্য একজনকে ফোন করে খোঁজ নিয়ে বলেন, ওই সিম সাবরিনারই এক রোগীর নামে নেয়া।

পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সাবরিনার ওই ফোন নাম্বারটি বাসাবো এলাকার পারভীন আক্তার নামে এক নারীর নামে নিবন্ধিত। এভাবে সিম ব্যবহার করা আইনসঙ্গত নয়। এই নম্বর ব্যবহার করে তিনি কোনো অপরাধ করলে দায় পড়বে আরেকজনের ওপর। সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কোনো জালিয়াতি হয়েছে কি না সেটাও একটি বিষয়। এটা একটা বড় অপরাধ। সৈয়দ মোশাররফ হুসাইন নামে এক সাবেক আমলার মেয়ে সাবরিনা পড়ালেখা করেছেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। ২৭তম বিসিএসে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। সাবরিনার আগেও বিয়ে হয়েছিল এবং সেই ঘরে তার দুই সন্তান রয়েছে। তবে আরিফুলকে বিয়ে করার পর তাদের কোনো সন্তান হয়নি।

থানা হাজতে সারারাত জেগে ছিলেন ডা. সাবরিনা
ডা. সাবরিনা তেজগাঁও থানার হাজতখানায় সারারাত জেগে ছিলেন। হাজতখানার সামনে একজন নারী প্রহরীর সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা বলেছেন। এছাড়া ভেতরে পায়চারি করেছেন। থানায় নেওয়ার পর তাকে কিছুক্ষণ একজন পুলিশ কর্মকর্তার কক্ষে বসানো হয়েছিল। এরপর তাকে হাজতে রাখা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, থানা হাজতেই তাকে রাখা হয়েছে। আমাদের দু’জন নারী প্রহরী সেখানে ডিউটিতে ছিলেন। তাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা বলেছেন। সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাকে পুলিশ পাহারায় আদালতে নেয়া হয়। এর আগে রোববার দুপুরে তাকে গ্রেফতারের পর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে প্রথমে একজন পুলিশ কর্মকর্তার কক্ষে বসানো হয়। এরপর হাজতে রাখা হয়। থানায় সাবরিনার স্বজনরা ও একজন গৃহকর্মী ছিলেন। থানা থেকে সরবরাহ খাবারই রাতে খেয়েছেন তিনি। হাজতখানায় তাকে পায়চারি করতে দেখেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

আমি জেকেজির চেয়ারম্যান না: আদালতে সাবরিনা
আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারককে হাতজোড় করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডা. সাবরিনা নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন। তিনি বলেন, আমি জেকেজির চেয়ারম্যান না। আমি চেয়ারম্যান হতে যাবো কেন? এটা তো একটা ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠান। ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমি নির্দোষ।

আদালতে বিচারক সাবরিনাকে জিজ্ঞেস করেন, তার কোনও আইনজীবী আছে কিনা। তখন এক আইনজীবী এসে বলেন, আমি তার আইনজীবী। এরপর তার আইনজীবী শুনানি করেন। শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে বিশেষ নিরাপত্তার মাধ্যমে সাবরিনাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর শুনানি শেষ হয় ১১টা ৫০ মিনিটে। পরে বিশেষ নিরাপত্তা আদালত থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

ব্রেকিং নিউজ :
Shares