একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ।


rafiq প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮, ২৩:৪৯ / ২১১
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ।

রফিক চৌধুরী————————-একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ। শুক্রবার সকাল ৮টার পর থেকে কোনও প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম চালাতে পারবে না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগ থেকে সব ধরনের প্রচার বন্ধ থাকার বিধান রয়েছে। শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি সম্পন্নে ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তায় মাঠে রয়েছে সশস্ত্রবাহিনী, পুলিশ, র্যাব-বিজিবিসহ অন্যান্য নিয়মতি বাহিনীর সদস্যরা।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ইত্তেফাককে বলেন, আমাদের ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। জেলায় জেলায় ব্যালট পেপার পাঠানো শেষ হয়েছে। আশা করছি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণভাবে এবারের ভোট সম্পন্ন হবে। ভোটারদের মাঝে যথেষ্ট উত্সাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। আমরা আহবান জানাব, আগামী ৩০ তারিখ সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা তাদের ভোটরাধিকার প্রয়োগ করবেন।

গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির মুখে গত ১২ নভেম্বর পুন:তফসিল ঘোষণা করা হয়। গত ১০ ডিসেম্বর প্রচারণা শুরুর পর থেকে টানা ১৮দিনের প্রচারণার মাধ্যমে জয়ের ব্যাপারে অংক মেলাতে চান রাজনৈতিক প্রধান দুই জোটের (মহাজোট-জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) পাশাপাশি অন্যান্য জোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে দুই প্রধান জোট-ই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

ভোটারদের পক্ষে টানতে কতটুকু প্রতিশ্রুতি দিতে পেরেছেন তার-ও হিসাব-নিকাশ চলতে থাকবে আগামীকাল শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত। কেননা রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিশনের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারীর বাইরে কোন যান-চলাচল করবে না। নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এর পাশাপাশি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দল প্রধান দুই জোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ এ নির্বাচনে লড়ছেন। এর বাইরে বাম মোর্চা ও ইসলামী কয়েকটি দলের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। নির্বাচনে নতুন প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভোটার প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবেন। এসব ভোটার জয়-পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে।

নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের নিয়ন্ত্রণে আজ শুক্রবার থেকে মাঠে নামছেন ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ-আনসার সদস্যরা। এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর র্যাব, ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী ও ২০ ডিসেম্বর বিজিবি মাঠে নামে। তিন স্তরের নিরাপত্তায় টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সবমিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পাঁচ লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকবেন। এবারের নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ১৪ থেকে ১৫জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওড় এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরও বেশি থাকবে। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে মোতায়েন করা হবে।

এদিকে, আজ মধ্যরাত থেকে সারাদেশে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ এবং ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে সড়ক ও নৌপথের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। ২৯ তারিখ মধ্যরাত থেকে ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা সব ধরণের বাস, টেম্পু ও নৌযান বন্ধ থাকবে। সাংবাদিকদের নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহারের উপরে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা শিথিল করেছে ইসি। এখন নির্বাচন কমিশনের অনুমতি গাড়ির স্টিকার নিয়ে তারা মটরযান ব্যবহার করতে পারবেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার ৩০০ আসনে ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার। নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোট কেন্দ্র ও ২ লাখ ৬ হাজার ৪৭৭টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এছাড়া সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা মনিটরিংয়ে আজ ইসিতে ‘আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং’ কমিটি কার্যক্রম শুরু করবে।

এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হচ্ছে। ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এটাই জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথম। ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে সাতক্ষীরা সদর, খুলনা, চট্টগ্রাম, রংপুর ও ঢাকার দুইটি আসনে। সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হবে। যেসব আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে, সেখানে ইভিএম মেশিন পৌঁছেছে। এখন ভোটারদের প্রশিক্ষিত করতে সেখানে মক ভোটিং চলছে। ভোট গ্রহণ কাজে নিয়োজিত থাকবেন প্রায় সাত লাখ কর্মকর্তা।

দীর্ঘ ১০ বছর পর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে রাজনীতিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল বর্জন করেছিল। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে মুখোমুখি হয়েছিল নৌকা-ধানের শীষ প্রতীক। এবার আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়ই জোটবদ্ধভাবে ভোটে অংশ নিয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের বিস্তর অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন (ইসি), প্রশাসন ও পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এসেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপিসহ কয়েকটি দল থেকে।

নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম রোধে ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটির জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে ২৪৪জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছে। আজ থেকে আরো ৬৪০জন প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামছেন। ভোটগ্রহণের আগে-পরে ৫দিন মাঠে থাকবেন। এছাড়া প্রার্থীদের আচরণ বিধি লঙ্ঘনের কারণে ৬৭৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।

বিকাশসহ মোবাইল ব্যাংকিং ৪৮ঘণ্টা বন্ধ

নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব বন্ধ করতে এবং অবৈধ অর্থ লেনদেন বন্ধ করতে বিকাশসহ দেশের সকল মোবাইল ব্যাকিং বন্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৮ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares