ঋণের সুদের হার নিয়ে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর।


rafiq প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১, ২০১৯, ০৩:০৫ / ১৯৬
ঋণের সুদের হার নিয়ে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর।

 বিশেষ সংবাদ দাতা , সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপের পরও ব্যাংক ঋণের সুদের হার কেন কমছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য কিছু কিছু ব্যাংক মালিকের সমালোচনা করেছেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল রোববার জাতীয় শিল্প মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের দেশে শিল্পায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ব্যাংক ঋণ। ব্যাংকের ব্যাপারটা আমরা দেখছি। কয়েকদিন আগে আমরা বসেছিলাম, কিভাবে ব্যাংকের সুদের হারা কমানো যায়। সাথে সাথে আমার এটাও আমার অনুরোধ থাকবে যারাই এই ঋণটা নেবেন আপনারাও যদি টাকাটা সাথে সাথে দিয়ে দেন বা সুদটা পরিশোধ করেন তাহলে ব্যাংকগুলো সচল থাকে। তখন কিন্ত সুদের হার কমানোটা খুব একটা কঠিন হবে না।
শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অনৃষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল হালিম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
ঋণের উচ্চ সুদের হার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি। একবার উদ্যোগ নিলাম সঙ্গে সঙ্গে কথাও বললাম। বেশকিছু সুযোগ সুবিধাও করে দিলাম। যেমন আগে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৭০ ভাগ অর্থ সরকারি ব্যাংকে আর ৩০ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হত। ব্যাংকের মালিকরা বললেন এটা যদি ফিফটি ফিফটি করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা (সুদের হার) সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনব। সেটাও কিন্তু করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম এবং দিলাম। কিছু ব্যাংকে ঠিকই সুদের হার নয় পারসেন্টে নামানো হল। কিন্তু সকলে তা করল না। বাড়াতে বাড়াতে ১৪, ১৫, ১৬ তে নিয়ে গেল। কেন করল না তাদের এই সুযোগটা দেওয়া সত্তে¡ও?
শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমার এখানে প্রশ্নটা হচ্ছে, এই ব্যাংকের মালিক যারা তাদেরও তো শিল্প কলকারখানা আছে। তারাও তো ব্যবসা-বাণিজ্য করে। এখন আমাকে তো সেই জায়গাটা আগে হাত দিতে হবে। তারা ব্যাংকও চালাচ্ছে, শিল্পও চালাচ্ছে আবার তারা সুদের হার কমাবে না। তাহলে তাদের ব্যবসা কি কি আছে, না আছে, ট্যাক্সটা ঠিক মতো দিচ্ছে কিনা, ভ্যাট ঠিকমতো দিচ্ছে কিনা, কাঁচামাল ঠিক মত আছে কিনা।
শুধু সরকারই সব করে দেবে তা তো না। আমরা তো বেসরকারি খাতকে সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বেসরকারি খাতকে কিন্ত আমাদের সংবিধানেই স্বীকৃতি দেওয়া আছে। আমি সরকারে আসার পর বেসরকারি খাতটা সবচেয়ে বেশি উন্মুক্ত করে দিয়েছি।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের একটা সার্বিক হিসাবে আছে দেশে ৭৮ লাখের মতো শিল্প কারখানা বেসরকারি খাতে আছে। প্রতি বছর সেখানে যদি একটা মানুষ কাজের সুযোগ পায় তাহলে ৭৮ লাখ লোক তো কাজ পেল। তারপরও কেন আমাদের হচ্ছে না সেটা হল কথা।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ না দেওয়া আরেকটা প্রবণতা। এই প্রবণতাটাও দূর করতে হবে। ব্যাংকের যে টাকা, এ টাকার মালিক তো জনগণ। বেসরকারি খাতে আমরা ব্যাপকভাবে ব্যাংক করার সুযোগ করে দিয়েছি। আমার সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ব্যাংক-বীমা করার সুযোগ সুবিধা আমরা দিয়েছি। ব্যাংক শুধু দিলেই হবে না। মানুষের মধ্যে ব্যাংক ব্যবহারের একটা প্রবণতাও তৈরি করতে হবে। সেটাও আমরা করে দিয়েছি।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইমার্জেন্সি টাইমেও অনেকেই ভুক্তভোগী। অনেক ব্যবসায়ীকে কষ্ট পেতে হয়েছে আমি জানি। কেউ জেলে গেছেন, কেউ দেশছাড়া। কারও ব্যবসা-বাণিজ্য, কারও শিল্প বন্ধ প্রায় দুই বছর পর্যন্ত। তাদের জন্য আমরা এরই মধ্যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। তাদের জন্য আমরা ইতিমধ্যে বিশেষভাবে প্রণোদনা দিয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরও দিয়ে…আমরা চাই ব্যবসায়ীরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোভাবে করতে পারে শিল্পায়নটা আরও দ্রুত যেন হয়।
শিল্পকারখানার মালিকদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে শিল্পায়ন ছাড়া কর্মসংস্থান সম্ভব না। আমাদের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। কিন্ত এ কৃষিভিত্তিক শিল্প আমাদের দরকার। সে ক্ষেত্রে একদিকে আমাদের যেমন শিল্পায়ন প্রয়োজন অপরদিকে আমাদের কৃষিপণ্য এবং খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করার শিল্পের উপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
কৃষিপণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত ও বিদেশে রপ্তানির জন্য নতুন নতুন বাজার খোঁজার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। তবে শিল্পায়ন করতে গিয়ে কৃষি জমি যেন নষ্ট না হয় সেদিকেও নজরও দিতে বলেন।
পণ্য রফতানিতে বিভিন্ন সুযোগ সবিধা দেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যদি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করতে চাই তাহলে কার্গো আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন কার্গো ভাড়া করে চালানো হচ্ছে। বিমানকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, বিমানকে শুধু প্যাসেঞ্জার টেনে লাভজনক করা যাবে না। কার্গো আমাদের দরকার। কার্গো ভিলেজ আমাদের তৈরি করা দরকার।
পণ্যগুলো যেন যথাযথভাবে, মানসম্মতভাবে সেখান থাকে এবং ২৪ ঘণ্টার ভেতর পাঠিয়ে দিতে পারি বিদেশে, সে ধরনের ব্যবস্থাপনায় আমাদের যেতে হবে। সেটায় যেতে গেলে বিদেশ থেকে কটা কার্গো ভাড়া করে নিয়ে আসব সেটা হবে না। আমাদের নিজস্ব কিছু থাকা দরকার, যাতে দেশের জন্য লাভজনক হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদোগে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী এই জাতীয় শিল্প মেলায় সারাদেশের বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির, হস্ত ও কারু এবং উচ্চ প্রযুক্তি খাতের প্রায় ৩শ’ প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে-দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচার, প্রসার, বিক্রয় ও বাজার সম্প্রসারণ এবং ছোট ও বড় উদ্যোক্তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন, যোগাযোগ ও সেতুবন্ধ তৈরিতে সহায়তা করা। মেলায় মোট ৩শ’ টি স্টল থাকবে। এসব স্টলে ১১৬ জন নারী এবং ১০৭ জন পুরুষ উদ্যোক্তা তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। অনুষ্ঠানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কর্মকান্ডের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়

ব্রেকিং নিউজ :
Shares