আজ সেই ভোট বিস্ফোরণের দিন আ. লীগ-বিএনপি ২২৭ আসনে মুখোমুখি


rafiq প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮, ২১:৩৩ / ১৮৬
আজ সেই  ভোট বিস্ফোরণের দিন আ. লীগ-বিএনপি ২২৭ আসনে মুখোমুখি

রফিক চৌধুরী—————————বিপুল প্রত্যাশার ভোট আজ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশের প্রায় ১০ কোটি সাড়ে ৪২ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশের শাসনভার তুলে দিতে তারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।

প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে গাইবান্ধা-৩ আসন বাদে জাতীয় সংসদের ২৯৯টি আসনে আজ রবিবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারই প্রথম নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সরকার বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে বিগত নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো এবার ভোটের লড়াইয়ে রয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্যজোটের মধ্যেই ভোটের মূল লড়াই হবে।

দেশের ১৭ কোটি মানুষ ও বিশ্ববাসীর চোখ থাকবে আজকের সংসদ নির্বাচন পরিস্থিতির ওপর। ভোট উত্সবে অংশ নিতে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর অস্থায়ী বাসিন্দারা ছুটে গেছেন নিজ নিজ এলাকায়। প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানী ঢাকা।

সরকারি দল, বিরোধী দল ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে সরব উপস্থিতির আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, কেন্দ্রে ভোটারদের ঢল নামলে কেটে যাবে সব শঙ্কা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাজোটের কর্মী, সমর্থক ও প্রার্থীদের ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, মানুষের মনে অনেক সংশয় ও সন্দেহ রয়েছে। তিনি ভোটারদের সকাল সকাল কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না। আপনারা গেলে দুর্বৃত্তরাই পালিয়ে যাবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, কেউ সহিংসতা ও নাশকতামূলক অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। কোনো ভয়ভীতির কাছে নতি স্বীকার না করে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ জানিয়েছেন, ভোটের মাঠে ৫০ হাজারের বেশি সেনাসদস্য মোতায়েন রয়েছে। তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির মুখে গত ১২ নভেম্বর পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট স্থগিত করে ২৭ জানুয়ারি নতুন ভোটের তারিখ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছেন সশস্ত্র বাহিনীসহ নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের সাধারণ কেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৫ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন থাকবেন। মেট্রোপলিটন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আরও একজন করে বেশি রাখা হবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওর এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরও বেশি থাকবে।

ভোটগ্রহণ উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। কালো টাকার বিস্তার ঠেকাতে ব্যাংক বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে সব মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও। ইসির অনুমোদন ছাড়া বন্ধ রয়েছে মোটরসাইকেল চলাচল। গত মধ্যরাত থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৭০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

নিবন্ধিত ৩৯ রাজনৈতিক দলের বাইরে অনিবন্ধিত কিছু দলও এ নির্বাচনে নিবন্ধিত দলের ব্যানারে ভোটে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে ১ হাজার ৮৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থেকে ১ হাজার ৭৩৩ জন এবং বাকি ১২৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নিবন্ধিত দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ২৭২ জন, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ২৮২ জন, জাতীয় পার্টি-জাপার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ১৭৫ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে লড়ছেন। নিবন্ধিত দলের মধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে সর্বাধিক ২৯৮ জন প্রার্থী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আছেন। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটের ১৪৭ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে সিপিবির ৭৪ জন প্রার্থী কাস্তে প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

ইসি জানিয়েছে, কেন্দ্রের ভেতরে কেবল প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের ইনচার্জ মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন। ভোটাররা কোনোভাবেই বুথ বা কেন্দ্রের ভেতরে ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। ভোটাররা কেউ মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রে গেলেও তা বন্ধ রেখে যেতে হবে।

ভোটে জোট-মহাজোটের মেরুকরণ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট-মহাজোটের ক্ষেত্রে নতুন মেরুকরণ তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। যা বিগত ১০টি জাতীয় নির্বাচন থেকে ব্যতিক্রম। তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে এসে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপি। ২০ দলীয় জোটের বাইরে ঐক্যফ্রন্টে কামাল হোসেনের গণফোরাম, আসম রবের জেএসডি, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ এবং মান্নার নাগরিক ঐক্য যোগদানের ফলে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ে। অন্যদিকে বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে রয়েছে। এখন মহাজোট (নৌকা) এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে (ধানের শীষ) ঘিরে ভোটের হিসাব নিকাশ করছেন ভোটাররা।

ফল পাওয়া যাবে কোথায়, কীভাবে: ভোট গ্রহণের পর প্রতিটি কেন্দ্রে গণনা শেষে বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসাররা লিখিত ফলাফল রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাবেন। তার আগে প্রতি প্রার্থীর কাছে ফলাফল শিট হস্তান্তর করবেন প্রিজাইডিং অফিসাররা। ঢাকায় নির্বাচন ভবনের ফোয়ারা প্রাঙ্গণে বিশেষ মঞ্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হবে।

বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে থাকছেন যারা: সারা দেশে ১ হাজার ৩২৮ জন নির্বাহী হাকিম এবং ৬৪০ জন বিচারিক হাকিম আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করবেন। কোনো অপরাধ সংঘঠিত হলে তাত্ক্ষণিকভাবে বিচার করে শাস্তি দিতে পারবেন তারা। এছাড়াও ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটির ২৪৪ জন সদস্য নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কাজ করবেন।

৬টি আসনে ইভিএমে ভোট:যে ৬টি আসনে এবার ইভিএমে ভোট হবে, সেখানে ৮৪৫টি কেন্দ্রে ৫ হাজার ৪৫টি ভোটকক্ষে মোট ২১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৪ জন ভোটার রয়েছেন। মোট ৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে তারা বেছে নেবেন ছয়জনকে। আসনগুলো হচ্ছে ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২ আসন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ সদস্য মোতায়েন: শুধু ভোটকেন্দ্র পাহারায় পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ ৮ হাজার জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে পুলিশ ১ লাখ ২১ হাজার, আনসার ৪ লাখ ৪৬ হাজার ও গ্রামপুলিশ ৪১ হাজার। এ ছাড়া ৪১৪ প্লাটুন সেনা, ৪৮ প্লাটুন নৌ-বাহিনীর সদস্য, ৪২ প্লাটুন কোস্টগার্ড, ৯৮৩ প্লাটুন বিজিবি ও ৬০০ প্লাটুন র্যাব সদস্য ভোটের মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচন কর্মকর্তা পৌনে ৭ লাখ: সব সংসদীয় আসনের নির্বাচন শেষ করতে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলায় সমসংখ্যক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুই বিভাগীয় কমিশনার এ দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সহায়তা করতে ৫৮২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনে শুধু ভোটারদের ভোটদানে সহায়তা করার জন্য ৬ লাখ ৬২ হাজার ১১৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার ৪০১৮৩ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন।

১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার:এবার ১ কোটি ২৩ লাখ নতুন ভোটার। নতুন ভোটারসহ মোট ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন।

২৫ হাজার ৯০০ দেশি পর্যবেক্ষক:নির্বাচনে ৮১টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ছাড়া বিদেশিদের মধ্যে ফেমবোসা, ওআইসি, কমনওয়েলথ ও অন্যান্য সংস্থার ৩৮ জন, কূটনীতিক ও বিদেশি মিশনের ৬৪ কর্মকর্তা এবং ঢাকাস্থ দূতাবাস/ হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।

 

ব্রেকিং নিউজ :
Shares