আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেন তেন ভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার নেই।


rafiq প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮, ২২:২৭ / ২৮৩
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেন তেন ভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার নেই।

রফিকচৌধুরী২০/১২/২০১৮ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার নেই। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে। দেশের শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। দেশবাসীর ভোটে যদি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারি, আলহামদুলিল্লাহ। যদি না পারি কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু দেশে শান্তি বজায় থাকুক। নির্বাচনে যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে সেজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা চাই জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)’র উদ্যোগে ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দলমত নির্বিশেষে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তাগণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ‘আশার প্রতীক’ আখ্যায়িত করে পুনরায় তাঁকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় সব সময় তাঁর পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির প্রতি শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির সমর্থন করে ব্যবসায়ীগণ প্রত্যাশাও ব্যক্ত করে বলেন, আগামী নির্বাচন হবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শান্তি সমৃদ্ধির দেশ গড়ার মাইলফলক। দেশের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাবৃন্দ, সিইও, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আমদানী-রপ্তানী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, তথ্য প্রযুক্তি এবং বিদ্যুত্ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন সেবাখাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংগঠনের কর্তাব্যক্তিগণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

২০২০ সালের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে উদযাপন করার সুযোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। যেন উন্নয়নটা অব্যাহত রাখতে পারি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকা প্রতীকে ভোট চাই। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের সেবা করার আরেকবার অন্তত সুযোগ দিন, আমরা উন্নয়নের কাজগুলো যেন শেষ করতে পারি। যদিও এর কোনো শেষ নেই। উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে, তবুও যে কাজগুলো হাতে নিয়েছি, তা যেন শেষ করতে পারি, এটাই আমি চাই।

এখন সুন্দর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এতগুলো কাজ হাতে নিয়েছি। আমরা কোনো দিক বাদ রাখিনি। সব দিকেই উন্নয়ন করে যাচ্ছি। অনেকগুলো কাজ হাতে নিয়েছি। সেটা যেন বাস্তবায়ন করতে পারি।’ বাংলাদেশ নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। জাতির পিতা বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড।’

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থানটা যদি দেখেন তাহলে দেখবেন ইউরোপের একদিক থেকে আরেকদিকে যেতে গেলে সুইাজারল্যান্ডকে ব্যবহার করতে হয়। একটা শান্তিপূর্ণ দেশ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকেই সেভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।’ বঙ্গবন্ধু প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন রচনা করতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার জন্য প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন। সে উন্নয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আর প্রতেবেশী দেশগুলোর সঙ্গে একটা যোগাযোগ ও সদ্ভাব সৃষ্টি করা, সেটাও আমরা খুব সফলতার সাথে করতে পেরেছি।’

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস থাকলে দেশে কোনো উন্নতি হয় না। কাজেই আমরা চাই দেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকুক। কারণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশটা থাকলে দেশটা এগিয়ে যাবে।’ নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। আপনাদের কাছ থেকে একটা সহযোগিতা চাই, আজ যে সুন্দর-শান্তিপূর্ণ পরিবেশটা আছে। সকল দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রেখেই যেন নির্বাচনটা হয়, সেই পরিবেশটা যেন বজায় থাকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমি অনেক কিছু সহ্য করেও সবার সঙ্গে বসে কথা বলেছি। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করেছি। সবাইকে বলেছি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। বাস্তবায়নাধীন মেগাপ্রকল্পগুলোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে হাওয়া ভবন তৈরি করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যেভাবে চাঁদা আদায় করা হয়েছিল তারও অবসান ঘটেছে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের জন্য যে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করেছি, এখনতো আর বলতে পারবেন না যে, কেউ হাওয়া ভবন খুলে সব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে থাবাথাবি করছে যে, কিছু করতে গেলেই ভাগ দিতে হবে। অন্তত আমরা সেটা করি না, করব না- এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। আমরা ব্যবসা করতে আসেনি। সরকার হিসেবে দায়িত্ব ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যার হাতে দেশের প্রতিটি খাতের উন্নয়নের রূপরেখা রয়েছে। ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের কথা বলেছিলাম, ২০ হাজার মেগাওয়াট করেছি। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৩ কোটি মোবাইল সিম। এগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যকে সহজ করে দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ মেটানো ও স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নেরও কথা উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান আমরা অব্যাহত রাখব, যাতে আমাদের সমাজে শান্তি ফিরে আসে। তার সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালা শুধু রাজধানীকেন্দ্রীক নয়, গ্রাম পর্যন্ত।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। ভাগ্য গড়তে এসেছি, বাংলার জনগণের। সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করাটাই আমার লক্ষ্য। অনেকেই বলে, আপনি সারা দিন-রাত এত পরিশ্রম করেন কেন? আমার বাবা এ দেশটা স্বাধীন করে দিয়েছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সেটা তিনি করতে পারেননি। তার সেই অসামপ্ত কাজটা শেষ করা দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে নিয়েছি

ব্রেকিং নিউজ :
Shares