এবার কর্ণফুলী নদী রক্ষায় আর কোন ছাড় নয়।


rafiq প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৮, ২০১৯, ১১:৫৩ / ২৫৫
এবার কর্ণফুলী নদী রক্ষায় আর কোন ছাড় নয়।

বিশেষ সংবাদদাতা চট্রগ্রাম থেকে ছুটির দিনেও থামবে না বুলডোজার
চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক দেশের প্রাণভোমরা কর্ণফুলী নদী রক্ষায় আর কোন ছাড় নয়। নদীখেকো দখলদারদের এবার সমূলে উচ্ছেদ করা হবে। শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও থামবে না বুলডোজার, হাতুড়ি, শাবল। গতকাল বৃহস্পতিবার টানা চতুর্থ দিনে আরও ৩০টি ছোট বড় পাকা ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দখলমুক্ত করা হয়েছে আরও একটি খালের মুখ। সোমবার থেকে শুরু হওয়া জেলা প্রশাসনের অভিযানে ১৭০টি ভবন ও স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে। একই সময়ে দখলদারেরা আংশিক সরিয়ে নিয়েছেন আরও অন্তত ১৩০টির মতো স্থাপনা। অভিযানে নগরীর সদরঘাটের লাইটারেজ জেটি থেকে শুরু করে লোহার পুল পর্যন্ত এলাকায় প্রায় সাত একর মূল্যবান জমি উম্মুক্ত হয়েছে। এসব জমি দখলে নিয়ে লাল পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
গতকালের অভিযান শেষে আজ শুক্রবারও অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বলেন, সদরঘাট থেকে বারিকবিল্ডিং পর্যন্ত এলাকার প্রতিটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত প্রথম দফার এ অভিযানে কোন বিরতি দেওয়া হবে না। সরকারি ছুটির দিনেও অভিযান চলবে। টানা অভিযানে ওই এলাকার ১০ একর ভ‚মি উদ্ধার করা হবে। সরকারের এমন কঠোর অবস্থানে ভীত দখলদারেরা। সাঁড়াশি অভিযানের মুখে তারা নিজেরাও স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, আগেও কর্ণফুলীর দুই পাড়ে উচ্ছেদ অভিযান হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট মুনির চৌধুরীর নেতৃত্বে পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার নদীতীরে প্রায় চার হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই বেশিরভাগ এলাকায় ফের নতুন করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। তবে এবার এমন সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। অভিযানের শুরু থেকেই বড় বড় দালান-কোঠা, কল-কারখানা, গুদাম, আড়ত বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে দখলদারদের কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে। এ কারণেই হম্বি-তম্বি আর হুমকি-ধমকি দিয়েও এসব প্রভাবশালীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সরকারের চেয়ে বড় প্রভাবশালী কেউ না। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনও জানিয়েছেন, অবৈধ সর্বশেষ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ধারণার চেয়েও বেশি স্থাপনা
আদালতের নির্দেশে কর্ণফুলীর দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা নির্ণয়ে জরিপ করে জেলা প্রশাসন। নগরীর নেভাল অ্যাকাডেমি সংলগ্ন নদীর মোহনা থেকে মোহরা এলাকা পর্যন্ত অংশে ২০১৫ সালে জরিপের কাজ শেষ করা হয়। জরিপে নদীর দুই তীরে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়। প্রতিবেদনটি ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালতে দাখিল করা হয়। জরিপ অনুযায়ী নগরীর সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকায় অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা দুই শতাধিক। কিন্তু উচ্ছেদ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। চার দিনের অভিযানে ১৭০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সবকয়টি স্থাপনা বহুতল, পাকা এবং আধা পাকা ভবন। গতকাল পর্যন্ত লোহার পুল এলাকার স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে। সেখান থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকায় আরও শতাধিক স্থাপনা অক্ষত আছে।
উচ্ছেদ অভিযানে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। বেশিরভাগ ভবন দীর্ঘদিনের পুরনো। এসব ভবন ভাঙ্গতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নিচ্ছে। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত ১৭০টি স্থাপনা পুরোপুরি উচ্ছেদ করে সাত একর জমি দখলে নেয়া হয়েছে। বাকি তিন একর জমি দখলে নিতে টানা অভিযান চলবে। বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত প্রথম দফার উচ্ছেদ অভিযান একটানা শেষ করা হবে। উচ্ছেদের সময় গতকাল লোহার পুল এলাকায় আরও একটি খালের মুখে উন্মুক্ত করা হয়। নগরী থেকে আসা খালটি কর্ণফুলী নদীতে পড়ে। কিন্তু অবৈধ ভবন তৈরি করে ওই খালটির মুখ প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়। খাল দখল করে যেসব ভবন তোলা হয়েছিল সেগুলোও ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এ নিয়ে গত চার দিনের অভিযানে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ খালের মুখ উন্মুক্ত করা হলো।
আদালতের নির্দেশনা মেনে চলমান উচ্ছেদ অভিযান তিন দফায় শেষ করা হবে। দ্বিতীয় দফার অভিযান শুরু হবে বারিক বিল্ডিং থেকে পতেঙ্গা কর্ণফুলীর মোহনা পর্যন্ত আর শেষ দফায় অভিযান চলবে নগরীর চাক্তাই থেকে কালুরঘাট রেলসেতু পর্যন্ত। জরিপ অনুযায়ী কর্ণফুলীর দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা আড়াই হাজার। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে দুই হাজার ৩৭০ কোটি টাকা মূল্যের ১৫৮ একর জমি দখলমুক্ত করবে জেলা প্রশাসন

ব্রেকিং নিউজ :
Shares