চট্রগ্রাম-১৩ আসনে অতীতের হিসেব- নিকাশে ব্যস্ত জনগন।প্রার্থীদের জন্য কঠিন চ্যালেন্জঃ


rafiq প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১১, ২০১৮, ২০:৪৮ / ২৪৪
চট্রগ্রাম-১৩ আসনে অতীতের হিসেব- নিকাশে ব্যস্ত জনগন।প্রার্থীদের জন্য কঠিন চ্যালেন্জঃ

।।জসিম মাহমুদঃ
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্রগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৯ সালের ফলাফলের নিরিখে ও উন্নয়নে কার কতটুকু ভূমিকা সেই নিয়েই চলছে ভোটের হিসাব নিকাশ। মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর মূল কারণ হলো আওয়ামীলীগ আর বিএনপি এবং তাদের বলয়ভুক্ত জোট সহজোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূলের সবাই অনেকটা নিশ্চিত ধারণা করেছেন আগামী জাতীয় নির্বাচন গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী মত অনুষ্ঠিত হবে না। ১৫৪ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয় লাভ এবং অন্যান্য আসনে নামেমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে খালি মাঠে এবার গোল দেওয়ার সুযোগ আর থাকবে না। বিএনপিসহ জোট ঐক্যফ্রন্ট অপরাপর জোটের অংশগ্রহনে এবার পরিস্থিতি হবে ভিন্ন রকম। খুব সহজেই নির্বাচনী বৈতরনী পাড়ি দেয়া যাবে না। আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলার উভয় দলের অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলাপচারিতা থেকেই উপরোক্ত বিষয়টি ফুটে উঠেছে। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতারা আরও জানান বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ভোটার বিহীন ও অন্যতম প্রধান দল বিএনপির অংশগ্রহনবিহীন নির্বাচনটিকে হিসাবেই ধরতে চাইবেন না। তাদের কাছে ভোটের অংকের হিসাব নিকাশ গুরুত্ব পাচ্ছে বিগত ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৯ সালের ফলাফলের ভিত্তিতেই। এরই প্রেক্ষপটে চট্টগ্রাম-১৩ আসনে মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীরা জনগনের সমর্থন পেতে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর কোমর বেধে নেমে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। আর শুরু করেছেন মাঠ জরিপ কিংবা চুল চেড়া হিসাব নিকাশে। এই আসনের অতীত ইতিহাস হলো:
১৯৯১ সাল-৯৪১০ ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামীলীগের বিজয়।
১৯৯১ সালে আওয়ামীলীগের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু- ৪২,৯৭৩ ভোট বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মোহাম্মদ কবির চৌধুরী- ৩৩,৫৬৩ ভোট জাতীয় পার্টির এ্যাডভোকেট শাহাদত হোসেন চৌধুরী- ৬,৮৬১ জামায়াতের মাহমুদুল হাসান চৌধুরী -২৫৬২ ভোট, ইসলামী ফ্রন্টের মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দীন- ২২৪৯ ভোট, বাংলাদেশ জাতীয়তা পার্টির আমিনুর রহমান- ৯৮৪ ভোট, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিকের আখতার কবির- ৩৯৯ ভোট, জাকের পার্টির আমীর আহমদ খান -২৪৯ ভোট, ন্যাপ ভাসানী নুরুল হক -১৯৯ ভোট, জেএফডি হতে মোকতার আহমদ- ১৪৬ ভোট, মুসলিমলীগের আলী আহমদ তালুকদার ৯৫ ভোট পেয়েছেন।
১৯৯৬ সাল- ১০৮৯১ ভোট বেশি পেয়ে বিএনপির বিজয়।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজাম- ৫২,৭৯২ ভোট, আওয়ামীলীগের আতাউর রহমান খাঁন কায়ছার -৪১,৯০১ ভোট, জাতীয় পার্টির এ্যাডভোকেট শাহাদত হোসেন চৌধুরী -৮৯২৬ ভোট, জামায়াতের এ্যাডভোকেট শামসুদ্দীন আহমেদ মির্জা -৪২১২ ভোট, ইসলামী ফ্রন্টের মোঃ মমতাজ উদ্দীন- ৩০৮৪ ভোট ন্যাপ ভাসানীর
রশিদুল হক- ২১২ ভোট জাকের পার্টির চিট্টু সেন বড়ুয়া ২১২ ভোট পেয়েছেন।
২০০১ সাল ৮২৮৬ ভোট বেশি পেয়ে বিএনপির বিজয়।
২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজাম ৭৬৭৪৩ ভোট আওয়ামীলীগের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ৬৮,১৮৭ ভোট, ইসলামী ফ্রন্টের আব্দুর নূর চৌধুরী ৩০৮২ ভোট, ইসলামী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের আব্দুস সত্তার রনি ১৬৮০ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হাই ১৫০ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম বকুল ১৩৩ ভোট, বাংলাদেশ প্রগ্রেসিভ পার্টির আলী আহমদ তালুকদার ১২৮ ভোট, জাসদের মোঃ আবু তাহের ৯৬ ভোট পেয়েছেন।
২০০৮ সাল ২৪২০০ ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামীলীগের বিজয়।
২০০৮ সালে আওয়ামীলীগের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু- ১,১০৯৫১ ভোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দল বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজাম- ৮৬,৭৫১ ভোট, ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন- ৪৩০৭ ভোট, গণফোরামের উজ্জ্বল ভৌমিক- ৫১৭ ভোট, বিকেএর রশিদুল হক- ৪২৮ ভোট পেয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালে নভেম্বর মাসে আখতারুজ্জামন চৌধূরী বাবু সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে ২০১৩ সালে জানুয়ারী মাসে উপ-নির্বাচনে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ১,২৪৯৬৪ ভোট প্রতিদ্বন্ধি গণফোরামের উজ্জ্বল ভৌমিক- ১৮৪৬ ভোট পেয়েছেন।
২০১৪ সাল বিএনপি ছাড়া আওয়ামীলীগের বিজয়।
২০১৪ সালে আওয়ামীলীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ১,৭৮,৯৮৫ ভোট, জাতীয় পার্টির তপন চক্রবর্তী ৫৪১৮ ভোট, বিএনএফের নারায়ণ রক্ষিত ১৯৫৪ ভোট পেয়েছেন।
সুতরাং অতীত হিসাব নিকাশ মাথায় রেখে আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া ৮ জন প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামীলীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ- নৌকা। বিএনপি সরওয়ার জামাল নিজাম – ধানের শীষ। গণ ফোরামের উজ্জ্বল ভৌমিক – সূর্য। বিএনএফের নারায়ণ রক্ষিত- টেলিভিশন। খেলাফত আন্দোলনের রশিদুল হক- বটগাছ। ইসলামী আন্দোলনের এরফানুল হক চৌধুরী- হাত পাখা। ইসলামী ফ্রন্টের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী- চেয়ার। ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন- মোমবাতি প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। এই আসনে আনোয়ারায় ১১টি ও কর্ণফুলী ৫টি ইউনিয়ন সহ মোট ১৬টি ইউনিয়নে আনোয়ারা ৬৭ টি কেন্দ্রে ১,৯৮,৬৪২ ভোট এবং কর্ণফুলী ৩৯ টি কেন্দ্রে ১,১০,৭৫৭ ভোটের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ বেশি ভোট পেয়ে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য হতে যাচ্ছেন কে জনমনে এটাই এখন প্রশ্ন ?
এ ব্যাপারে বিএনপির (ঐকফ্রন্ট) মনোনয়ন প্রাপ্ত সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম বলেন ৩০ ডিসেম্বের স্বৈরচারীর কোন বাধা জনগণ
মানবে না। নির্বাচনে সাধারণ জনগণ ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবে।
অপরদিকে আওয়ামীলীগের আনোয়ারা উপজেলার সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি, জনগণ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অতীত কাজের মূল্যায়ন করে এবং উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য আবারও বিজয় করবে। অন্যান্যদলের প্রার্থীরাও বিজয়ের আশা নিয়ে নির্বাচনীর গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। তাই এবার অতীত হিসাব মাথায় রেখে ভোটার ও নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে হিসাব নিকাশ।
Gssnews24.com

ব্রেকিং নিউজ :
Shares