কর্ণফুলী নদীর হাজার বছরের ঐতিহ্য”সাম্পান”,এখন বিলুপ্ত!


rafiq প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮, ২৩:৪৫ / ৪২০
কর্ণফুলী নদীর হাজার বছরের ঐতিহ্য”সাম্পান”,এখন বিলুপ্ত!
  • জসিম মাহমুদ————–
    কর্ণফুলী নদীর হাজার বছরের ঐতিহ্য ‘সাম্পান’। এক সময়ে এ বাহনটি কর্ণফুলী, হালদা ও সাঙ্গু নদীতে চলাচল করতো। পরে তা এখানকার অন্যান্য নদী, খাল-বিলে এটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে সাম্পান প্রথম সৃষ্টি হয় কর্ণফুলী নদীতে। প্রচলন আছে যে, কর্ণফুলী নদীতে একসময় যাত্রীবাহী জাহাজ ও স্টিমার চলাচল করতো। জাহাজ থেকে নেমে যাত্রীরা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে কূলে ওঠার জন্য সাম্পানের সৃষ্টি হয়। এটি পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই।

    কর্ণফুলীর সাম্পান নিয়ে রচনা হয়েছে অসংখ্য গান আর কবিতা। এই সাম্পান ওয়ালারাই ছিলেন একসময় অসংখ্য নারীর স্বপ্নের পুরুষ। তাইতো আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালি ঘোষের কণ্ঠে সেই গান আজো সংগীত প্রিয় মানুষের মনে দোলা দেয়।

    ‘ওরে সাম্পান ওয়ালা,
    তুই আমারে করলি দিওয়ানা।
    বাহার মারি যারগই সাম্পান
    কি বা ভাটি, কি বা উজান।
    বন্ধু বিনে পরান বাঁচে না-রে
    সাম্পান ওয়ালা,
    তুই আমারে করলি দিওয়ানা।’

    কর্ণফুলী নদীতে কি পরিমাণ সাম্পান চলাচল করে তার কোন পরিসংখ্যান জানা যায়নি। তবে সাম্পানের কয়েকজন মাঝির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক যুগ আগেও এ নদীতে সাম্পান চলাচল করতো কমপক্ষে দুই হাজার। বর্তমানে এ সংখ্যা কমে হয়েছে কয়েকশ’। নদীর দু’ধারে নতুন নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণে মানুষের মধ্যে নদী নির্ভরতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে এ নদীর ঐতিহ্য সাম্পান এখন হারিয়ে যাচ্ছে।

    সাম্পান বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে। ছোট আকারের একটি সাম্পানের দৈর্ঘ্য আনুমানিক ২০ ফুট এবং প্রস্থ কমপক্ষে সাড়ে ৪ ফুট। এ ধরনের একটি সাম্পানে ১৫ থেকে ১৮ জন যাত্রীধারণ হয়। এছাড়াও এ সাইজের চেয়ে আরো বড় সাম্পান রয়েছে। এগুলোতে যাত্রীধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ জন।

    কর্ণফুলী নদী ঐতিহ্য প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর বর্তমান যে বিবর্ণ অবস্থা তা অতীতে ছিল না। অতীতে চট্টগ্রাম বন্দরে নির্মিত জাহাজ রপ্তানি হতো সারা বিশ্বে।’
    ইতিহাস থেকে জানা যায়, সপ্তদশ শতকে তুরস্কের সুলতানের নৌ বহরের অধিকাংশ জাহাজ নির্মিত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। একবার এক আদেশে সুলতান চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৩টি জাহাজ ক্রয় করেছিলেন। বৃটিশ নৌ বহরেও চট্টগ্রামে নির্মিত জাহাজের প্রাধান্য ছিল। ১৯২৪ সালে কলকাতা বন্দরে ১১টি বৃটিশ জাহাজের মধ্যে ৮টিই ছিল চট্টগ্রামের তৈরি।
    ১৯০০ শতকে চট্টগ্রামে এক হাজার টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ তৈরি হতো।

    সিজার ফ্রেডারিক লিখেছেন প্রতিবছর চট্টগ্রাম থেকে ২৫ থেকে ৩০টি জাহাজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। চট্টগ্রামের তৈরি জাহাজ আলেকজেন্দ্রিয়ায় তৈরি জাহাজের চেয়ে উন্নত ছিল। জার্মানির ব্রেমার হ্যাভেন জাদুঘরে এখনও চট্টগ্রামের তৈরি জাহাজ প্রদর্শনীর জন্য রক্ষিত আছে। এই ক্ষুদ্র রণতরীটি ১৯১৮ সালে নির্মিত হয়েছিল।
    ©দৈনিক পূর্বকোণ

ব্রেকিং নিউজ :
Shares