দিনভর উত্তপ্ত ঢাবি ক্যাম্পাস ৩১ মার্চের মধ্যে পুনর্নির্বাচনের আল্টিমেটাম, অশান্তি করলে কঠোর ব্যবস্থা : ভিসি, শিক্ষার্থীরা না চাইলে শপথ নয় : ভিপি নুর


rafiq প্রকাশের সময় : মার্চ ১৪, ২০১৯, ০৪:৩৩ / ২২৮
দিনভর উত্তপ্ত ঢাবি ক্যাম্পাস ৩১ মার্চের মধ্যে পুনর্নির্বাচনের আল্টিমেটাম, অশান্তি করলে কঠোর ব্যবস্থা : ভিসি, শিক্ষার্থীরা না চাইলে শপথ নয় : ভিপি নুর

বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদ দাতা   ডাকসুর পুনঃনির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ, স্মারকলিপি, অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্যানেলের দাবির সাথে একমত পোষণ করে নব-নির্বাচিত ভিপি শিক্ষার্থীরা না চাইলে শপথ নিবেন না উল্লেখ করে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে পুনঃনির্বাচনের তাফসিল ঘোষণা করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে মঙ্গলবার আমরণ অনশন শুরু করেন ৫ শিক্ষার্থী, বুধবার সারাদিন পচন্ড রোধের মধ্যেও তাদের অনশন অব্যাহত রাখতে দেখা গেছে। এদিন অনশনে আরও একজন শিক্ষার্থী যোগ দিলে অনশনকারীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ জনে। অন্যদিকে মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকেই প্রভোস্ট এর পদত্যাগ ও পুনঃনির্বাচনের দাবিতে হলে বিক্ষোভ শুরু করে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা। সারারাত বিক্ষোভ চলতে থাকে হলটিতে। রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থণ জানিয়ে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অন্যান্য ছাত্রী হলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। নব-নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুরও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে রোকেয়া হলের প্রভোস্টয়ের নৈতিক স্থলন ঘটেছে দাবি করে তার পদত্যাগ চান। ৫ প্যানেলের প্রতিনিধিদের স্মারকলিপি ও পুনঃনির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। পুনঃনির্বাচনের সুযোগ নেই ইঙ্গিত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ অশান্তির পারিবেশ সৃষ্টি করতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারি দেন তিনি। সন্ধ্যায় ভিসির পক্ষ থেকে বার্তা পাঠিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ ও বিজয়ীদের অভিনন্দন জানানো হয়।
বিজয়ীদের ভিসির শুভেচ্ছা।

অন্য দিকে পূর্ণনির্বাচনের  দাবীতে আন্দোলন  সংগ্রামএর   মধ্যেই প্রায় আড়াই যুগ পর অনুষ্ঠিত হওয়া ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানান ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তর থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়া সকল প্রার্থীকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সহযোগিতা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। একইসাথে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়।

পুনঃনির্বাচনের দাবিতে দিনভর কর্মসূচি
বুধবার দুপুর ১২টায় পুনঃনির্বাচনসহ ৩ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাষ্কার্যের সামনে মিলিত হয় নির্বাচনে অংশ নেয়া ৫টি প্যানেল। সেখানে সমাবেশ করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বেলা ২টার দিকে ভিসি কার্যালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রধান করা হয়। এসময় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন, ফারুক হাসান, স্বতন্ত্র স্বাধীকার পরিষদ থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করা অরণি সেমন্তি খান, বাম জোটের লিটন নন্দী, ছাত্র ফেডারেশনের উম্মে হাবীবা বেনজির, স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী এ. আর. এম. আসিফুর রহমানসহ ১০জন প্রতিনিধি ভিসি কার্যালয়ে তার সাথে দেখা করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থণ জানিয়ে সেখানে উপস্থিত হন নুরুল হক নুর। আরআগে ভিসি কার্যালয়ের সামেন অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য রাখেন তিনি। এসময় আন্দোলনে সমর্থণ জানিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাকে ভোট দিয়েছেন। তারা এই নির্বাচন বাতিল করে পুনঃর্র্নিবাচন চায়। আমি শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে সব পদে ৩১ মার্চের মধ্যে নির্বাচন চাই। পরে বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে মুহসীন হলে আবার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি। ডাকসুতে শপথ নিবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে নুরুল হক নুর বলেন, যারা আমাকে ভোট দিয়ে পাশ করিয়েছেন তারা চাইলে আমি শপথ নেবো, আর তারা না চাইলে শপথ নেব না। প্রশাসনকে পুনঃনির্বাচন দিতে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে ডাকসুর ভিপি বলেন, শত কারচুপির পরও আমাকে এবং আখতার হোসেন হারাতে পারেনি। তবে অন্যদের হারিয়ে দিতে পেরেছে তারা নীলনকশা করে। এখন আমরা দেখছি যে ছাত্রলীগ বাদে অন্য সব সংগঠন পুনঃর্র্নিবাচন চাইছে এবং সে লক্ষ্যে তারা আন্দোলন করছে। আজ ভিসি স্যারকে আমি পুনঃনির্বাচন দিতে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে।
রোকেয়া হলের প্রভোস্ট এর পদত্যাগ দাবি
এদিকে ডাকসুতে পুনঃনির্বাচন ও রোকেয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর জিনাত হুদার পদত্যাগের মঙ্গলবার রাতভর বিক্ষোভ করেন ছাত্রীরা। এসময় তারা ছাত্রীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাও প্রত্যাহারের দাবি জানান। মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে শুরু করে ছাত্রীদের বিক্ষোভ বুধবার সকাল ৮ট পর্যন্ত চলে। এরপর কয়েক ঘন্টা বিরতি দিয়ে বিকেল ৩টায় আবার শুরু হয় বিক্ষোভ কর্মসূচি। এতে ছাত্রলীগ ছাড়া হল সংসদে নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্য সকল প্যানেলের প্রার্থীরা অংশ নেন। দুপুর তিনটায় রোকেয়া হলের মূল ফটকে অবস্থান করে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রীরা। রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে পূর্ণ সমর্থন জানান অন্য ছাত্রীহলগুলোতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে হলটিতে পুনঃনির্বাচন দিতে দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে কবি সুফিয়া কামাল হল, শামসুন্নাহার হল ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নব-নির্বাচিত ৩ জন স্বতন্ত্র ভিপি ও ২জন জিএস উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে শামসুন্নাহার হলের নব নির্বাচিত জিএস আফসানা ছপা বলেন, রোকেয়া হল সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সারারাত ধরে চলা বিক্ষোভ ও উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আমরা খুবই শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি যে, ৪০ জনের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা মামলা করা হয়েছে এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা নির্বাচিত হল সংসদ স্বতন্ত্র প্যানেল ও প্রার্থীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং তাদের দাবিগুলোর সাথে একাত্মতা পোষণ করছি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুফিয়া কামাল হলের জিএস মনীরা শারমিন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা নির্বাচিত হয়েছি। আমাদের হলগুলোতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। যে হলগুলোতে কারচুপি হয়েছে সেখানে আবার নির্বাচন চাই। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল হলের ভিপি তানজীনা আক্তার সোমা, শামসুন্নাহার হলের ভিপি তাসনীম আফরোজ ইমিসহ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত বিভিন্ন পদের সম্পাদকরা।
৬ শিক্ষার্থীর অনশন অব্যাহত
এদিকে অনিয়মের অভিযোগে ডাকসু নির্বাচন বাতিল করে পুনঃর্র্নিবাচনের জন্য ছয় শিক্ষার্থীর অনশন বুধবারও অব্যাহত ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসার আগ পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তারা। অনশনে বসা ছয় শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহীদ তানজিম, দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাঈন উদ্দিন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ, ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রনি হোসেন এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফিয়া তামান্না। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই শিক্ষার্থীরা অনশন শুরু করেন। নির্বাচন বাতিল ও নির্বাচনে দায়িত্বপালন করা সংশ্লিষ্টদেও পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি করলে কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারি ভিসির
পুনঃনির্বানের সুযোগ নেই ইঙ্গিত দিয়ে ক্যাম্পাসে কেউ অশান্তি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। বুধবার পুনঃনির্বাচনের দাবিতে ৫ প্যানেলের স্মারকলিপি দেয়া নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে তিনি এ কথা বলেন। ঢাবি ভিসি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হলে তা মেনে নেয়া হবে না। ডাকসু নির্বাচন সফল করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫০ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর শ্রম-সময় ও মেধার যে খরচ হয়েছে, তার প্রতি অসম্মান করার এখতিয়ার আমার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থিতিশীল, সুশৃঙ্খল ও ভালো একটি একাডেমিক পরিবেশ বিরাজ করছে। সবাইকে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে আহ্বান জানাবো। অপরাধমূলক কোনও কাজ সংঘটিত হলে, সেসবের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares