শপথ নিয়েই বহিষ্কার, সুলতান মনসুর


rafiq প্রকাশের সময় : মার্চ ৮, ২০১৯, ০৩:৪৭ / ১৭২
শপথ নিয়েই বহিষ্কার, সুলতান মনসুর

বিশেষ সংবাদ দাতা  দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে গণফোরাম থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বহিস্কারের কথা জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু।
এদিকে গতকাল শপথ নিয়েই সংসদ অধিবেশনে যোগদান করেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। অধিবেশনে দেয়া প্রথম বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত হলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যূত হইনি। তিনি সংসদ নেতা এবং অন্যান্যদের ধন্যবাদ জানান এবং সংসদে তার প্রতি দৃষ্টি রাখার আহবান জানান।
গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দলীয় শৃংখলা বিরোধী ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আদর্শবিরোধী কাজ করায় সুলতান মনসুরকে গণফোরাম থেকে বহিস্কার করা হল। সেই সঙ্গে তার দলীয় প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হল। তিনি জানান, সুলতান মনসুরের বহিস্কারের চিঠি স্পিকার বরাবর পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। মন্টু বলেন, দল বহিস্কার করায় সংবিধান অনুয়ায়ী সুলতান মনসুর সংসদ সদস্য থাকতে পারবেন না।
মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, সুলতান মনসুর গণফোরামের সদস্য হওয়ার আবেদন পত্রে দলের গঠনতন্ত্র, কর্মসূচি, নিয়মকানুন, আদেশ-নির্দেশ মেনে চলার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে প্রহসনের নির্বাচনের জাতীয় সংসদে সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি গণফোরামের গণমুখী আদর্শের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। গণফোরাম এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনে করে গণতন্ত্র পুন:উদ্ধার ও ভোটের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে পদদলিত করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে আপনি নৈতিকতাবিরোধী, জনবিরোধী এবং সংসদীয় রীতি বিরোধী কাজ করেছেন। তিনি শপথ নেওয়ায় দল, জনগণ এবং ঐক্যফ্রন্ট মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ। আমরা তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করছি। একই সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পদ হতে অব্যাহতি দিচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্টু বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা দেড়টার দিকে ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক  ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে এই বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে ড. কামাল হোসেনের পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মোস্তাফা মোহসীন মন্টু নিজে ও গণফোরাম থেকে নির্বাচিত অপর সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই সুলতান মনসুরকে বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত হয়।
সুলতান মনসুরের শপথ নেয়াকে বিএনপি রাজনৈতিক ছলনা বলে অখ্যায়িত করেছে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়ার যুগ্মমহাসচিব রহুল কবীর রিজভী বলেন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর রাজনৈতিক ছলনা ও অঙ্গিকার ভঙ্গ করেছেন। জনগণের মতামত উপেক্ষা করে শপথ নিয়ে তিনি গণশত্রæতে পরিণত হয়েছেন।
তবে শপথ নেয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সুলতান মনসুর বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত ঐক্যফ্রন্ট নেবে। আমি এ কথা বলতে পারি যে, আমি যা করেছি তা আমাদের দলের শীর্ষ নেতার নলেজে করেছি। তিনি বলেন, আমি এর আগেও সংসদ সদস্য ছিলাম। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ জেনে-বুঝেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গতকাল বেলা ১১টায় সংসদ ভবনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে শপথবাক্য পাঠ করান। জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান শপথ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের আটজন প্রার্থী নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দুজন গণফোরামের সদস্য। কিন্তু এই নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন ঐক্যফ্রন্টের সদস্যরা। এর মধ্যে গত মাসের শেষ দিকে সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান ৭ মার্চ শপথের নেওয়ার ঘোষণা দেন। তবে গতকাল মনসুর শপথ নিলেও শপথ নেওয়াে থেকে বিরত থাকেন মোকাব্বির খান।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares