রাজধানীর চকবাজারের কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ আগুন- নিহত ২৩ আহত শতাদিক।


rafiq প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২১, ২০১৯, ০৬:২৯ / ১৮৩
রাজধানীর চকবাজারের কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ আগুন-  নিহত ২৩ আহত শতাদিক।

বিশেষ সংবাদ দাতা রাজধানীর চকবাজারের একটি পাঁচতলা ভবনে বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৩৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, জরুরি বিভাগ ও মিটফোর্ড হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ রাত সাড়ে ৩টায় সাংবাদিকদের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৯ থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করতে পেরেছি। ভবনের ভেতর তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চুরিহাট্টা মসজিদ গলির ওই ভবনের নিচতলায় দাহ্য পদার্থ ভরপুর থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে প্রায় দেড়শ’ লোকের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এ অগ্নিকাণ্ড ঘটল। দমকল বাহিনীর ৩৭টি ইউনিটের নিরলস চেষ্টার পর বুধবার রাত সাড়ে ৩টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে ভবনটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর ১৬টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তবে ভবনে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না।

শেষপর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের মোট ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হয়। পার্শ্ববর্তী পাঁচটি ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়লেও পরে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। দমকল বাহিনীর পরিচালক মাহফুজ রিবেন রাত ১টায় সাংবাদিকদের জানান, ভবনটিতে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এ ঘটনায় ভবনের ভেতরে কেউ আটকা পড়ে আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান শিকদার রাত ৩টায় বিডি সংবাদ ৭১ কে   বলেন, ভয়াবহ এ আগুনে গুরুতর আহত ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়া ৩১ জনকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের মনোযোগ এখন আগুন নিয়ন্ত্রণ করার দিকে। নিয়ন্ত্রণ হলেই হতাহতের সংখ্যা বলা যাবে।

ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের ২০০ সদস্য ঘটনাস্থলে কাজ করছেন। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ এবং পরিচালক (অপারেশন) মেজর একেএম শাকিল ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণের নেতৃত্ব দেন। ঘটনাস্থলে পানির সংকট এবং রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে তাদের বেগ পেতে হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী পাশের ভবনের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন জানান, যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে তার নাম ‘অহেদ ম্যানশন’। ভবনটি প্রথম থেকে তৃতীয়তলা পর্যন্ত বিভিন্ন মার্কেট এবং গোডাউন ছিল। এসব দোকান ও গোডাউনে নানা ধরনের কেমিক্যাল ছিল। ক্ষণে ক্ষণে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।

তিনি জানান, ভবনটির চার এবং পাঁচতলায় মানুষ বসবাস করত। আগুন থেকে বাঁচতে অনেককে উপর থকে লাফিয়ে পড়তে দেখা যায়। ভবনটির দোতলায় প্রসাধন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর গুদাম ছিল।

একটি সূত্র জানায়, ভবনের নিচে মাইক্রোবাস ও পিকআপের মধ্যে সংঘর্ষের পর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ওই ভবনে আগুন লেগে যায়। গভীর রাতে আশপাশে শত শত উৎসুক জনতা ভিড় করে।

এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- রেজাউল ইসলাম (২১), সেলিম হোসেন (৪৫), আনোয়ার (৫৫), মোস্তাফিজুর রহমান (৫৫), জাহিদুল ইসলাম বাবু (২৮), জাকির হোসেন (৫০), হেলাল (১৮), লামিম (১২), মাহমুদ হোসেন (৫৭), সালাহ উদ্দিন, মোজ্জাফার (৩২), সোহাগ হোসেন (২৩) ও ইভান (৩০)।

লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান বলেন, ‘বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।’ঘটনাস্থলে ছুটে আসা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মাহফুজ রিবেন জানান, কিভাবে আগুনের সূত্রপাত, তা এখনও জানা যায়নি।

চকবাজার থানার এসআই কামরুজ্জামান বলেন, চুরিহাট্টা মসজিদ গলির আবাসিক ভবনে আগুন লাগার খবর পেয়ে থানার একাধিক কর্মকর্তা সেখানে ছুটে গেছেন। আগুন লাগা ভবনের আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। আমাদের চানখাঁরপুল প্রতিনিধি জানান, আগুনের লেলিহান শিখা এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে পুরো চকবাজার এলাকায় ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে যেতে ছোটাছুটি করতে থাকে।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares