রফিক চৌধুরী বিডি সংবাদ একাত্তররংপুর-৩ উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টি ও মহাজোট মনোনীত প্রার্থী মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ (সাদ এরশাদ)। গণনা শেষে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মোট ১৭৫টি ভোট কেন্দ্রের সবক’টির ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাদ এরশাদ লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ৫৮,৮৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রিটা রহমান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৬,৯৪৭ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ মোটর গাড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৪,৯৮৪ ভোট। ফলাফল অনুযায়ী প্রদত্ত ভোটের হার ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
রংপুর সদর উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪২ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৩১০ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৭৬২ জন। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান পেয়েছিলেন ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট। ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫২ দশমিক ৩১ শতাংশ।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের গত ১৪ জুলাই মৃত্যুর পর গত ১৬ জুলাই আসনটি শুন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। গতকাল এ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টায় ইভিএমের মাধ্যমে এ ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলে। গণনা শেষে নির্বাচন কমিশন রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদকে বিজয়ী ঘোষণা করে।
‘রংপুরের মাটি, এরশাদের ঘাঁটি’ স্লোগানকে আবারো বাস্তবে রূপ দিলেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দীর্ঘ ৩০ বছর দখলে থাকা রংপুর-৩ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজয় অর্জনে সক্ষম হয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এ জয়ের মধ্য দিয়ে পার্টির অস্তিত্ব এবং এরশাদের ভোট ব্যাংক দুটোই রক্ষা করতে সক্ষম হলেন তারা।
দলীয় প্রার্থী এরশাদপুত্র সাদ এরশাদ রংপুরে না থাকায় ‘বহিরাগত’ হিসেবে তাকে জেতাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। স্থানীয় প্রার্থী না দিয়ে সাদকে প্রার্থী করায় মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর পরই দলটি স্থানীয়ভাবে দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি পক্ষ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনে সাদ এর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকে। তাছাড়া দল থেকে বহিষ্কৃত এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় দলটি আরও একটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। স্থানীয় এবং এরশাদ পরিবারের সন্তান হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ আসিফ শাহরিয়ারের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে কাজ করেন। এতে সাদ এর পক্ষে যারা কাজ করেন তাদের জন্য এ নির্বাচন বেশ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি জাতীয় পার্টির দূর্গ ধরে রাখাটাও কঠিন হয়ে পড়ে।
নির্বাচনে ভোটারদের মূলত চাহিদা ছিল স্থানীয় প্রার্থী। সে অনুযায়ী ভোটারদের অনেকাংশেরই দৃষ্টি ছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুর প্রতি। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেষ মুহুর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ায় ভোটাররা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও নির্বাচন বিমুখ হয়ে থাকেন। আর এ সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন এরশাদের ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য আসিফ শাহরিয়ার। স্থানীয় প্রার্থী আর এরশাদ পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি বেশ অগ্রসর হতে থাকেন। এতে বেকায়দায় পড়ে যায় জাতীয় পার্টি। চেষ্টা চালাতে থাকে মহাজোটের শরিক আওয়ামী লীগকে নির্বাচনী কাজে লাগাতে এবং নির্বাচন বিমুখ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে প্রচারের শেষ দিনে তাদের এক মঞ্চে আনতে সক্ষম হন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। আর এতেই হিসেব-নিকেশ পাল্টে যায়। এক দিনের ব্যবধানে ভোটের হাওয়া ঘুরে যেতে থাকে সাদ এরশাদের দিকে। অবশেষে প্রতিদ্ব›িদ্ব ২ প্রার্থীকে পেছনে ঠেলে বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন সাদ এরশাদ। আর জয়ের মধ্য দিয়েই রক্ষা হল জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব এবং এরশাদের ভোট ব্যাংক।
আপনার মতামত লিখুন :