মীর জাফরের দেশে’ পরিনত হয়েছে, গ্রামের চৌকিদার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান তারই রাজত্ব।


rafiq প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৯:৪১ / ২৯৭
মীর জাফরের দেশে’ পরিনত হয়েছে, গ্রামের চৌকিদার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান তারই রাজত্ব।

“মীর জাফরের দেশে’পরিনত হয়েছে গ্রামের চৌকিদার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান————————————

=====মুক্ত মত=======

…..মফিজুল হক চৌধুরী,

মীর জাফর আলী খাঁ।বাংলা অভিধানে একটা প্রতিকী নাম।বিশ্বাস ঘাতক এর সংজ্ঞায় নামটি বহুল পরিচিত ৷
পৃথিবীর দেশে দেশে মীর জাফর ছিল, আছে, থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে একটু অস্বাভাবিক একটু মাত্রাতিরিক্ত, এই আর কি ! ক্ষমতা, অর্থ ও স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধির বিনিময়ে কিভাবে মানুষ জাতীয় ও বৃহত্তর স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়েছে যুগে যুগে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ৷আমি আজ এ বিষয়ে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করার চেষ্টা করবো ৷
মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর এর সম্রাজ্ঞী নুর জাহান কঠিন রোগে আক্রান্ত । এদেশীয় কোন ডাক্তারের চিকিৎসায় ফল পাওয়া যাচ্ছিল না ৷ তখন ভারতবর্ষে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ‘ নামে এক বৃটিশ ব্যবসায়ীদের দলে একজন ইংরেজ চিকিৎসক ছিলেন, নাম -স্যার টমাস রো,খবর পেয়ে তিনি রাজদরবারে এসে চিকিৎসা দিয়ে রানীকে সুস্থ করে তুললেন ৷ বিনিময়ে সম্রাট তাকে উপহার দিলেন- বিনা শুল্কে ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বাণিজ্য ও কুঠি নির্মানের সনদ এবং ৩টি প্রদেশের জায়গীর তথা জমিদারি ৷ বৃটিশ শাসনের গোড়াপত্তন ঐখানেই I তখন কিন্তু মীর জাফরের জন্ম ও হয়নি ৷
মীরজাফর কিন্তু একা বিশ্বাস ঘাতক ছিলেন না, ছিলেন- রায় দুর্লভ, জগৎ শেঠ, উমিচাঁদ, ঘষেটী বেগম প্রমূখ বিশ্বাস ঘাতকের দল ৷ বিভিন্ন রাজা-বাদশা, সুলতান,সম্রাট এর আমলে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা এবং এসব ষড়যন্ত্রে প্রধান ক্ষমতাসীনদের নিকটাত্মীরা জড়িত থাকতো ।
এদেশে যুগে যুগে বীর পুরুষ যেমন জন্ম নিয়েছে পাশাপাশি মীর জাফররা ও জন্ম নিয়েছে প্রচুর ৷ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক ‘মাস্টার দ্য সূর্যসেন ‘ কে বৃটিশ সৈন্যদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরই এক জ্ঞাতি ‘নেত্রসেন ‘ ,শুধুমাত্র অর্থ পুরস্কারের লোভে ৷’৭১ সালের মহান মুক্তি যুদ্ধে ,এদেশের মুক্তিসেনাদের আস্থানা দেখিয়ে দেয়া, এদেশের মা-বোনদের বর্বর পাক বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল এদেশেরই রাজাকার আল বদররা, শুধুমাত্র অর্থ আর ক্ষমতার হালুয়া রুটির লোভে ৷ তেমনি বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্য নায়ক ছিল তাঁরই ঘনিষ্টজন খন্দকার মোশতাক,

জিয়াউর রহমান হত্যার পিছনে কল কাঠি নেড়েছে জেনারেল এরশাদ শুধুমাত্র ক্ষমতার মসনদে আরোহনের আশায় ৷
মীর জাফররা একেক সময় একেক বেশে আবির্ভূত হয়েছে ৷ এখন মীর জাফরদের তালিকা অনেক দীর্ঘ , বলে কিংবা লিখে শেষ করা যাবে না ৷ যারা স্বৈরাচার ও দুঃশাসকদের দোসর ছিল তারা ও মীরজাফর, আজ যারা খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে মানুষ মারছে তারা ও মীরজাফর, যারা দেশের অর্থ বিদেশে পাচারকরছে তারাও, খাদ্যপণ্য গুদামজাত করে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে তারা ও, যারা ক্যাসিনো,জুয়া, মাদক দিয়ে দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তারা ও মীর জাফর ৷ ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির যারা বারোটা বাজাচ্ছে তারা ও, হত্যা, গুম, লুণ্ঠন, ধর্ষন করে যারা আইন শৃংখলার অবনতিঘটাচ্ছে তারা ও তো “মীর জাফর ” ।গ্রামের চৌকিদার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত, প্রতিটি সেক্টরে মীর জাফরের দল ঘাপটি মেরে বসে আছে ৷অনেক ক্ষেত্রে সরকারীভাবে এদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় ,শুধুমাত্র স্বীয় স্বার্থ ও ক্ষমতার লোভে ৷
দেশীয় ও জাতীয় স্বার্থ এসব মীর জাফরদের হাতে আজ ভূ-লুন্ঠিত । এসব দেখার কেউ নেই ৷ প্রশাসন কী দেখবে ? সর্ষের ভিতর যে ভূত রয়েছে ! খাদ্যে বিষ,ঔষধে বিষ, কাজেকর্মে বিষ, এক কথায় সর্বত্র বিষাক্ত এক পরিবেশ বিরাজমান ৷আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভাল জানেন, এই বিষাক্ত ” মীর জাফর ” দের চক্র থেকে আমরা আদৌ মুক্তি পাবো কিনা ! বড়ই দুর্ভাগ্য, আমরা জন্মেছি এই সব মীর জাফরদের দেশে ৷

নিউজ টি সেয়ার করুন ফেইসবুকে

ব্রেকিং নিউজ :
Shares