১৯৫২ সালে বাঙালি জাতি কেবল ভাষার দাবিতে আন্দোলন করেনি। মাতৃভাষা বাংলার পাশাপাশি তারা সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলনেও ঝাপিয়ে পড়ে। আর এই আন্দোলনে আত্মত্যাগ করেন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা আরও অনেক বাঙালি বীর সন্তান। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শুধু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে বাঙালিদের মুখে তুলে দিতে চায়নি। একই সঙ্গে এই বঙ্গের মানুষের জীবনমানসহ পুরো সংস্কৃতির চেহারা পাল্টে দিতে চেয়েছে। কিন্তু বাঙালি যুবকেরা পাকিস্তানী হানাদার শাসকগোষ্ঠীর সেই আশা পূরণ হতে দেয়নি। বরং তারা বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে আদায় করে মাতৃভাষা বাংলা, রক্ষা করে হাজার বছরের বাংলা ভাষার সংস্কৃতি। বায়ান্নর ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে চার ফেব্রুয়ারি ঢাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। ধর্মঘট শুধু ঢাকার স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ডাকা হলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই ধর্মঘট বাংলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালন করে শিক্ষার্থীরা। ৪ ফেব্রুয়ারির সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনই ছিল মূলত ভাষা আন্দোলনের চুড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি।
৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থী ভাষা আন্দোলনের জন্য সফল প্রস্তুতি গ্রহণের পর ২১ ফেব্রুয়ারি চুড়ান্ত আন্দোলন চলে। ৫ ফেব্রুয়ারি নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের জরুরী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই সভা থেকে সর্বসম্মতিক্রমে সবাইকে আহ্বান জানানো হয় বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে সবাই যেন আপোসহীন সংগ্রাম চালিয়ে যায়। এই আহ্বান যদিও ছাত্রদের করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সকল মানুষের মধ্যে এই আহ্বানের সাড়া পড়ে। আর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষে তাদের মাতৃভাষা রক্ষা ও আদায়ের দাবির আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। এভাবেই ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির মনে গেথে গেছে ভাষার সাথে। তাইতো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি জুড়েই থাকে নানা আয়োজন। ইতিহাসের এ গৌরবান্বিত আন্দোলনগুলো দেশ ও বিশ্বের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
আপনার মতামত লিখুন :