মসজিদ আল নুর এর হামলাকারী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে ক্রাইস্টচার্চ ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে হাজির করা হয়।


rafiq প্রকাশের সময় : মার্চ ১৭, ২০১৯, ০৪:১৯ / ২৮৬
মসজিদ আল নুর এর  হামলাকারী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে ক্রাইস্টচার্চ ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে হাজির করা হয়।

বিডি সংবাদএকাত্তর ডেস্ক   নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে ৪৯ মুসল্লিকে হত্যা করা উগ্র শ্বেতাঙ্গ খুনি ব্রেন্টন ট্যারান্টকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত রিমান্ডে দিয়েছে স্থানীয় আদালত। গতকাল আদালতে হাজির করে তার বিরুদ্ধে হত্যাকান্ড সঙ্ঘটনের অভিযোগ আনা হয়। ২৮ বছরের ওই উগ্র মুসলিমবিদ্বেষী খুনির বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারক। ৪৯ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা ব্রেন্টন ট্যারান্টের জন্য আদালতে কোনও জামিন আবেদন করা হয়নি। আগামী ৫ এপ্রিল ফের তাকে আদালতে দেখা যেতে পারে।

নিউজিলেন্ডের প্রধান মন্ত্রী  দেশটির অস্ত্রআইন এর  সস্কার করে আরো কঠিন করার অঙ্গীকার করেছেন। বৈধভাবে ক্রয় করা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে মসজিদে হত্যাকান্ড চালানো ব্যক্তিকে শনিবার অভিযুক্ত করার পর তিনি এ অঙ্গীকার করলেন। তিনি বলেন, এসব আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে সেমি-অটোমেটিক দু’টি রাইফেল, দু’টি শটগান ও একটি লিভার-অ্যাকশন অস্ত্র। ব্রাশফায়ারে ৩ জন বাংলাদেশির নিহত হবার কথা আগে জানানো হলেও নিউজিল্যান্ডের অনারারি কনসাল জানাচ্ছেন, ড. আব্দুস সামাদের স্ত্রী বেঁচে আছেন এবং সুস্থ আছেন বলে তার পুত্র জানিয়েছেন। যে ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ তত্তে¡র ভিত্তিতে শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারান্ট নৃশংস হামলা চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যা করেছে তার জনক জনক জঁ রেঁনো ক্যামু এর নিন্দা জানিয়েছেন। শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চে হতাহতদের সহায়তায় গঠিত তহবিলে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ ডলার (বাংলাদেশি ২০ কোটি ৯৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা) জমা হয়েছে।

এদিকে শান্ত, ছবির মতো সুন্দর শহর ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার পর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ৪৯ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানির পর পুরো শহর যেন কালো স্কার্ফ দিয়ে মোড়ানো। শোক প্রকাশের ভাষাও অনেকের জানা নেই। নীরবতাই যেন হয়ে উঠেছে সেই শোকের সর্বজনীন ও একমাত্র ভাষা। শহরের হঠাৎ এই বিপর্যয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মানুষ। শোক প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে। ব্যাথা বোঝানোর ভাষা না পেয়ে তাই সবাই নীরব হয়ে গেছেন। কথায় আছে অধিক শোকে নাকি মানুষ পাথর হয়ে যায়। বিশেষ করে মুসলিমদের শোকের মাতম দেখলেই বোঝা যায় কতটা অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা।
মসজিদের যেখানে নৃশংস হামলার ঘটনাটি ঘটেছে তা থেকে অল্প কয়েক মিটার দূরে মানুষ আসছেন। একজন একজন করে সেখানে তারা নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছেন। সেখানে দাঁড়ানো অনেকের চোখে পানি। তবে বেশিরভাগ মানুষ সেখানে গিয়ে নির্বাক তাকিয়ে থাকেন আর দেখেন। তাদের মধ্যে একজন মার্ক ইসাক। তার বন্ধুও সেই মসজিদে হামলার শিকার। তবে প্রাণে বেঁচে গেলেও হাসপাতালে মৃত্যুর মুখোমুখি। বন্ধুকে ইসাক দেখতে পারেননি। তাকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তবে বন্ধু যেখানে হামলা শিকার হয়েছেন সেখানে গিয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন।
দাউদ নবী নামের একজন আফগান অধিবাসী মসজিদে হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ১৯৭৭ সালে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমানো দাউদ সেখানকার একজন কমিউনিটি নেতা ছিলেন। তার ছেলে ইয়ামা আল নবী সাংবাদিকদের বলেন, ‘গোলাগুলির সময় আরেকজনের জীবন বাঁচাতে গিয়ে তিনি (বাবা) শহীদ হয়েছেন।’
আল নুর মসজিদে হামলার খবর শুনে দ্রুত সেখানে ছুটে যান আল নবী। তবে তিনি দেরি করে ফেলেন। হামলাস্থলে পৌঁছানোর পর তাকে একজন এসে বলে, ‘তোমার বাবা আমার জীবন বাঁচিয়েছে।’ পরে তার ভাই ওমর তাকে নিশ্চিত করেন, হামলাকারীর ধারণ করা ভিডিওতে তিনি তার বাবার মৃত্যু দেখেছেন। নিউজিল্যান্ডের হাজারো মানুষ গতকাল গণহত্যার শিকার ওই মসজিদ ও হামলাস্থলে যান। হামলার ঘটনায় নিহতদের বন্ধু ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন তারা। আর যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই শিশু ছিল বলে জানা যায়।
নাজিব গার্ডিয়ানের প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা মানুষের অবস্থা দেখার জন্য এসেছি। আমরা অনেককে হারিয়েছি। আমাদের অনেক বন্ধু নিহত হয়েছে এই হামলায়। আমরা জানি না কারা বেঁচে আছে আর কারা হাসপাতালে আছে। আমার তিনজন বন্ধু আছে ভেতরে। তারা বুলেটবিদ্ধ। আমরা এখন একটি স্কুলে যাচ্ছি যেখানে লাশের তালিকা আছে।’
নিখোঁজদের মধ্যে তিন বছর বয়সের একটি শিশু আছে। শেষবার তাকে তার বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে আল নূর মসজিদে দেখা যায়। ১৪ বছর বয়সী আরও এক কিশোর নিখোঁজ। যার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ফুটবলার হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার পরিবার জানতে পারে যে, সে আর নেই। আল নূর মসজিদে ঢোকার পর থেকেই নিখোঁজ স্থানীয় ক্যাশমেরে স্কুলের ১০ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী।
তবে যারা ওই নৃশংস হামলা থেকে বেঁচে ফিরেছেন তাদেরও হয়েছে ভয়ঙ্কর সব অভিজ্ঞতা। আদিম সামি নামের ৫২ বছর বয়সী এক বাবা নাটকীয়ভাবে তার দুই ছেলের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। মসজিদে হামলাকারী যখন নির্বিচারে গুলি করা শুরু করে তখন তিনি তার ২৯ ও ২৩ বছর বয়সী ছেলে আবদুল্লাহ আর আলির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের প্রাণ রক্ষা করেছেন। তবে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে থেকে নিজে বাঁচতে পারেননি তিনি।
হামলায় বুলেটবিদ্ধ আদিব এখন হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়। তার মেয়ে বলছিলেন, ‘আমার বাবা একজন প্রকৃত নায়ক। তিনি আমার ভাইদের বাঁচাতে নিজের পিঠ বুলেটের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। তিনি তাদের সাথে কিছুই ঘটতে দেননি।’
অস্ত্র আইন সংস্কারের অঙ্গীকার নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দেশটির অস্ত্র আইন সংস্কার করে আরো কঠিন করার অঙ্গীকার করেছেন। বৈধভাবে ক্রয় করা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে মসজিদে হত্যাকান্ড চালানো ব্যক্তিকে শনিবার অভিযুক্ত করার পর তিনি এ অঙ্গীকার করলেন। জেসিন্দা আরডার্ন বলেন, অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ২৮ বছর বয়সী ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের এ বন্দুকধারী ২০১৭ সালের নভেম্বরে ‘ক্যাটাগরি এ’র বন্দুক লাইসেন্স নিয়ে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনে। শুক্রবারের ওই হামলায় সে এসব অস্ত্র ব্যবহার করে। ক্রাইস্টচার্চে যাওয়ার আগে ওয়েলিংটনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এসব আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে সেমি-অটোমেটিক দু’টি রাইফেল, দু’টি শটগান ও একটি লিভার-অ্যাকশন অস্ত্র।’
নিউজিল্যান্ডের দুজন গ্রামীণ পুলিশ কর্মকর্তা নাটকীয়ভাবে ক্রাইস্টচার্চে হত্যাকান্ড চালানো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। কর্তৃপক্ষ তার ব্যাপারে সতর্ক সঙ্কেত জারি করার ৩৬ মিনিট পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা আরডার্ন ওই দুই পুলিশের সাহসিকতার জন্য তাদের প্রশংসা করেন।
নিহত বাংলাদেশী আবদুস সামাদের স্ত্রী জীবিত আছেন
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত তিনজন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন বলে এর আগে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানালেও তারা এখন বলছেন, সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। দূতাবাসের অনারারী কনসাল শফিকুর রহমান শুক্রবার দিবাগত রাতে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. আবদুস সামাদের স্ত্রী জীবিত আছেন এবং নিউজিল্যান্ডে তাদের বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে মিঃ সামাদের পুত্র তারেক দূতাবাসকে জানিয়েছেন। মোট নিহত বাংলাদেশীর সংখ্যা এখন দুইজন’ বলে জানান শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নিহতের সংখ্যা নিয়ে কনফিউশন হলেও এটা ভালো দিক যে একজন জীবিত আছেন বলে জানা গেল’। এর আগে নিহত বাংলাদেশীর সংখ্যা তিনজন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ড. আবদুস সামাদের স্ত্রী, যাকে নিখোঁজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছিল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে। তবে পরে তার পরিবার দূতাবাসকে জানায় যে, মিসেস সামাদের খোঁজ পাওয়া গেছে এবং তিনি সুস্থ আছেন। ড. আবদুস সামাদ স্থানীয় লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। এর আগে ড. সামাদ বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন বলে জানান মি. ভুইয়া। নিহত আরেকজনে পরিচয় সম্পর্কে মি. রহমান বলেন যে, মিসেস হোসনে আরা ফরিদ একজন গৃহবধূ ছিলেন। মসজিদে হামলার ঘটনায় অন্তত পাঁচজন বাংলাদেশী আহত হয়েছে বলে বাংলাদেশের দূতাবাস এখন পর্যন্ত খবর পেয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানান জনাব রহমান। এছাড়া এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে কর্মকর্তারা বলছেন।
বাংলাদেশ দূতাবাসের অনারারী কনসাল শফিকুর রহমান বলেছেন, দূতাবাসের পক্ষ থকে যত ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন তারা দেবেন। তিনি স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার সকালে ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছেছেন। দূতাবাস বলছে, যে কোন তথ্য বা সাহায্যের জন্য ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করা যাবে। জরুরী যোগাযোগের জন্য যে দুটো নম্বরে ফোন করা যাবে, সেগুলো হলো +৬১ ৪২৪ ৪৭২৫৪৪ এবং +৬১ ৪৫০১ ৭৩০৩৫।
যেসব শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ষড়যন্ত্র তত্ত¡ প্রচার করছে হামলাকারী
ব্রেন্টন ট্যারান্ট যখন অস্ত্র বোঝাই গাড়ি নিয়ে আল নুর মসজিদের দিকে যাচ্ছেন, তখন তার গাড়িতে যে গানটি বাজছিল, সেটি একটি সার্বিয়ান জাতীয়তাবাদী রণসঙ্গীত। ‘চেটনিকস’ নামে পরিচিত সার্বিয়ান প্যারামিলিটারি ইউনিট ১৯৯২-৯৫ সালের বসনিয়ান যুদ্ধের সময় এটিকে তাদের কুচকাওয়াজ সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করতো। এই সঙ্গীতে বসনিয়ান সার্ব নেতা রাদোভান কারাদজিচের প্রশংসা রয়েছে। গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাদোভান কারাদযিচ দোষী সাব্যস্ত হন। মুসলিমদের এবং অভিবাসীদের হত্যার কারণে যেসব লোকের সাজা হয়েছে, তাদের অনেকের নাম লেখা আছে ব্রেটন ট্যারান্টের আগ্নেয়াস্ত্রগুলিতে।
একটি বন্দুকের গায়ে লেখা ‘ফর রডারহ্যাম।’ যুক্তরাজ্যের রডারহ্যামে শিশুদের ওপর এশিয়ান মুসলিম পুরুষদের যৌন নিপীড়নের যে কেলেঙ্কারির ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল, সেই ঘটনাকেই এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া অটোম্যান সাম্রাজ্যের সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলোর ঐতিহাসিক অনেক লড়াইয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বিভিন্ন শব্দ লেখা ছিল তার অস্ত্রশস্ত্রে।
অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যম খবর দিচ্ছে, ব্রেন্টন ট্যারান্ট সিডনি থেকে প্রায় ছয়শ’ কিলোমিটার উত্তরের একটি শহর গ্রাফটনের লোক। তার সাবেক বস ট্রেসি গ্রে দাবি করছেন, ব্রেন্টনের মধ্যে তিনি কখনো কোন চরমপন্থী চিন্তাভাবনা বা পাগলামি আচরণ দেখেননি।
ব্রেন্টন টারান্টের দীর্ঘ ইশতেহারটির শিরোণাম হচ্ছে ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’। এতে যে ধরনের ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ তুলে ধরা হয়েছে, তা সাম্প্রতিককালে অনলাইনে দ্রুত প্রসার লাভ করছে। এই ষড়যন্ত্র তত্তে¡ বিশ্বাসীদের একটি ব্যাপক আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীও তৈরি হচ্ছে।
এই ষড়যন্ত্র তত্তে¡র মূল কথা হলো, ইউরোপীয়রা ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাদের তুলনায় নিকৃষ্ট এবং বিপদজনক জাতি ও সংস্কৃতির দাপটে। মূলত মুসলিমদের নিয়ে ঘৃণা এবং ভীতি ছড়ানোর সাঙ্কেতিক আলোচনা বলে মনে করা হয় এসব আলোচনাকে। এই ষড়যন্ত্র তত্তে¡ আরও বলা হচ্ছে, পশ্চিমা দুনিয়ায় যে অভিবাসীদের আসার হার বেড়েই চলেছে, এর পেছনেও রয়েছে ষড়যন্ত্র। বিশ্ব পুঁজিবাদকে টিকিয়ে রাখতে বড় বড় রাষ্ট্র এবং কর্পোরেশনগুলো ‘হোয়াইট জেনোসাইড’ বা ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যায়’ উৎসাহ যোগানোর নীতি নিয়েছে। এই ইশতেহারে এন্টি সেমিটিক (ইহুদী বিদ্বেষী) এবং নব্য নাৎসীবাদী কথাবার্তাও আছে। পশ্চিমা দুনিয়ায় যে উগ্র ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটছে তার পেছনে এ ধরনের ‘ষড়যন্ত্রমূলক তত্তে¡র’ বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নানা ধরনের গোপন গোষ্ঠী ফেসবুকে এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব প্রচারণা চালাচ্ছে জোরে-শোরে।
তবে ওই নারকীয় তান্ডবে দুনিয়াজুড়ে যখন সমালোচনার ঢেউ ওঠে তাতে শামিল হন খোদ এই তত্তে¡র জনকও। মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের ওপর এই হত্যাকান্ডের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ তত্তে¡র জনক জনক জঁ রেঁনো ক্যামু মনে করেন, ইউরোপের জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে অভিবাসীরা। তবে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে নৃশংসতা চালানো খুনির ইশতেহারের নিন্দা জানিয়ে এই লেখক দাবি করেছেন, তার তত্ত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েই কেউ একজন এই ভয়াবহ হত্যাকান্ড চালিয়েছে যা নিন্দনীয়। জঁ রেঁনো ক্যামু’র ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ তত্ত্বটি প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। ৭২ বছরের ক্যামু ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি-কে বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ অহিংস’।
এক বছর ধরে বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ নেন ব্রেন্টন
নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্ট দেশটির একটি রাইফেল ক্লাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। রাইফেল ক্লাবটি অবস্থিত দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দ্বীপাঞ্চল ওটাগোতে। মূলত সামরিক বাহিনীর আদলে তৈরি রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। দৈনিক নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ঘাতক ব্রেন্টন ট্যারান্ট নিউজিল্যান্ডের ডানেডিন শহরের দক্ষিণে অবস্থিত ব্রুস রাইফেল ক্লাবের অন্য সদস্যদের মতোই ছিলেন। তিনি আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনায় ছিলেন বেশ দক্ষ। তাছাড়া ক্লাবের সব নিয়ম তিনি মেনে চলতেন।
হেরাল্ডের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বেন্ট্রন ২০১৭ সাল থেকে ডানেডিনে বসবাস করছেন। রাইফেল ক্লাবে তিনি যোগ দেন ২০১৮ সালের শুরুর দিকে। তাছাড়া মসজিদে হামলার আগে ঘাতক অনলাইনে যে ইশতেহার পোস্ট করেন সেখানেও তার আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যাপারটি জানানো হয়েছে।
ব্রুস রাইফেল ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্কট উইলিয়ামস বলেন, ‘বেন্টন অন্য সবার মতো প্রতিদিন আসতো। আমরা আমাদের সদস্যদের ভালো পর্যবেক্ষণের মধ্যেই রাখি। অস্ত্র-সংক্রান্ত সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ করবে সদস্যরা তা অনুসরণ করে। তবে আমরা তো এটা বলতে পারি না যে, কে শ্বেতাঙ্গ জঙ্গি কেননা আমরা এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে তেমন কাউকে দেখিনি।’
নিউজিল্যান্ডের দুই মসজিদে হামলাকারী তার ব্যবহৃত অস্ত্রের সক্ষমতা বাড়িয়ে নিয়েছিল। এতে যুক্ত অধিক সক্ষমতার ম্যাগজিনের কারণে তার পক্ষে অল্প সময়ে অনেক মানুষকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছিল। উচ্চ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন যে ম্যাগজিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত অস্ত্রে পাওয়া গেছে সেগুলোর লাইসেন্স বেসামরিক ব্যক্তিদের দেওয়া হয় না। হত্যাকারী নিজে সেগুলো যুক্ত করে বৈধভাবে বিক্রি হওয়া অস্ত্রটিকে সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল।
হতাহতদের সহায়তায় ২৫ লাখ ডলার
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে গণহত্যার শিকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের হাজার হাজার মানুষ। শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে শেতাঙ্গ এক সন্ত্রাসীর হামলার পর হতাহতদের সহায়তায় গঠিত তহবিলে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ ডলার (বাংলাদেশি ২০ কোটি ৯৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা) জমা হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের ভিক্টিম সাপোর্ট গ্রুপ কাউন্সিল অনলাইনে তহবিল গঠনের উদ্দেশে একটি ইভেন্ট চালু করেছে। ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে নৃশংস হামলার প্রায় ১১ ঘণ্টা পর এই ইভেন্ট চালু করা হয়। গিভএলিটল নামের ওয়েবসাইটে চালু এই অর্থ সংগ্রহ তহবিলে এখন পর্যন্ত ১৬ লাখ ডলার জমা হয়েছে।
একই ধরনের আবেদন জানিয়ে তহবিল সংগ্রহ ইভেন্ট চালু করেছে লঞ্চগুড। তাদের অ্যাকাউন্টেও জমেছে প্রায় ১০ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লঞ্চগুড মুসলিমদের সহায়তায় বৈশ্বিক একটি ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমদের সহায়তার জন্য তারা এ ধরনের উদ্যোগ নেয়। সূত্র : বিবিসি, গার্ডিয়ান, এএফপি, নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares