বি এন পি আসলে প্রানবন্ত হবে সংসদ। আওয়ামী লীগের যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপির সংসদে আসা প্রয়োজন


rafiq প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১২, ২০১৯, ২১:৪০ / ২৮৯
বি এন পি আসলে প্রানবন্ত হবে সংসদ।  আওয়ামী লীগের যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপির সংসদে আসা প্রয়োজন

রফিক চৌধুরী—————————একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮টি আসন পাওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সংসদে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, মনোনয়ন বাণিজ্য না করলে হয়তো বিএনপি আরও কয়েকটি আসন পেতে পারত। তারপরও যে কয়টা সিটে তারা জিতেছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে তারা যদি চায়, তাদের পার্লামেন্টে আসা প্রয়োজন

শনিবার বিকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ২০১৮ সালের ৬ জুলাই গণভবনে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের এটাই প্রথম যৌথসভা।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয় বলেই মানুষ ভোট দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ গত দশ বছরে জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।

এ জন্য মানুষ ভোট দিয়ে আবারও বিজয়ী করেছে। জনগণ বুঝতে পেরেছে, শুধু আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, দেশের উন্নয়ন হয়। দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এটা মনে করে বলেই সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে তারা নির্বিশেষে সমর্থন দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগই দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। জনগণ তাদের ওপর সে আস্থা, বিশ্বাস রেখেছে। কাজেই জনগণের প্রতি আমাদেরও কর্তব্য অনেক বেড়ে গেছে। আরও পাঁচ বছরের জন্য আমরা ম্যান্ডেট পেলাম। আমাদেরকে এখন একটাই চিন্তা করতে হবে, আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি সেগুলো যেমন বাস্তবায়ন করতে হবে, বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য আরও কী কী করতে পারি সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে বিএনপি নিজেদের মধ্যে কোন্দল-মারামারি করেছে। বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি। সকালে একজন, বিকালে আরেকজনকে মনোনয়ন দিয়েছে।

মানুষ জানতে পেরেছে যে এদের চরিত্রটা কী। এদের চরিত্র শোধরায়নি। বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপরও একটি দলের প্রধান দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত, যাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান করা হয়েছে, সেও খুনি, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও দুর্নীতির মামলায় বিদেশে পালাতক, তখন তাদের এমন ফল বিপর্যয় স্বাভাবিক।

ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এর মধ্যেও যে কয়েকটি আসনে তারা বিজয়ী হয়েছে, আমি মনে করি গণতন্ত্রের স্বার্থে তাদের সংসদে আসা উচিত। আমার কাছে সব ঘটনা লিপিবদ্ধ করা আছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা মাঠেঘাটে দেখেছেন, টেলিভিশনে দেখেছেন কীভাবে তারা প্রচেষ্টা চালিয়েছিল কোনোমতে নির্বাচনটা যেন বানচাল করা যায় কিন্তু তা তারা পারেনি। এখন বিএনপি নির্বাচনে হেরেছে, এই দোষটা তারা কাকে দেবে? দোষ দিলে তাদের নিজেদেরকে দিতে হয়। কারণ একটি রাজনৈতিক দলের যদি নেতৃত্ব না থাকে, মাথাই না থাকে তাহলে সেই রাজনৈতিক দল কীভাবে নির্বাচনে জয়ের কথা চিন্তা করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটুকু বলতে পারি যে, আমরা যখন সরকারে এসেছি, আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি, জনগণের জন্য কাজ করেছি। আমরা কিন্তু কোনো রিভেঞ্জ নিতে চাইনি, বা আমরা কাউকে কোনো হয়রানিও করতে যাইনি। তাদের কৃতকর্মের জন্য বা দুর্নীতির জন্য যে মামলা হয়েছে সে মামলা আপন গতিতে চলবে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন, কাজেই সেভাবেই চলবে।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটা স্বর্ণযুগ ছিল দাবি করে তিনি আরও বলেন, কিন্তু ষড়যন্ত্র কখনও থেমে যায় না। ২০০১ সালে চক্রান্ত করে আমাদেরকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। আমরা ভোট বেশি পেলাম কিন্তু সরকার গঠন করতে পারলাম না। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের জীবনে যে দুর্বিষহ অবস্থা ছিল, সেটা আমরা সবাই জানি। সেটা নিয়ে আর আমার বেশি বলার প্রয়োজন নেই। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটগতভাবে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে কিন্তু ভোটের হার ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকে অনেক বেশি ছিল। আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে আমাদের যেটা লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে তুলব। দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছাতে পেরেছি। সেইভাবে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি বলেই মানুষের এই উপলব্ধিটা এসে গেছে- আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে তারা ভালো থাকে, তাদের জীবনমান উন্নত হয়। তাদের দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হতে হয় না। তারা শান্তিতে থাকতে পারে। তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, এটা তারা উপলব্ধি করতে পারে।

২০১৩ থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা দেশের মানুষ কখনও মেনে নিতে পারেনি। ২০১৪ সালে আবার আমরা সরকার গঠন করি। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা একটানা দশ বছর হাতে সময় পেয়েছিলাম, যার ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় আমরা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে পেরেছি তার ফলে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়লাভ করেছি দাবি করেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে যারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল, তারাও কিন্তু সবাই এগিয়ে এসেছিল আমাদের এ নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার জন্য। বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়ার জন্য। এখানে ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতি মেহনতি মানুষ থেকে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়- প্রত্যেকের মাঝে একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, আওয়ামী লীগ এলে তারা ভালো থাকবে, আওয়ামী লীগ এলে দেশটা ভালো চলবে। আওয়ামী লীগ এলে দেশের উন্নতি হবে। এই উপলব্ধিটা তাদের মাঝে ব্যাপকভাবে দানা বেঁধে যায়। তাই টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ায় দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচনে সব থেকে লক্ষণীয় বিষয় ছিল, মানুষের মধ্যে একটা স্বতঃস্ফূর্ততা এবং ভোট দেয়ার আগ্রহ। বিশেষ করে এ দেশের তরুণ সমাজ, যারা প্রথম ভোটার এবং নারী সমাজ। এবারের নির্বাচনটা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হলেও কিছু কিছু জায়গায় বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে গেছে। কোথাও তারা নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করেছে এবং তাদের এই অপকর্মের কারণে বেশকিছু প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকে আছেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দেয়া মামলার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এসেছি। আমরা অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে এসেছি। জনগণের বিশ্বাস-আস্থাটা যে কারণে আমাদের ওপরে এসেছে। আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করি জনগণের কল্যাণে, জনগণের স্বার্থে। আর জনগণ আজ সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছে।

বক্তব্যের শুরুতে প্রয়াত নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোক প্রকাশ করা হয়। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। পরে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতির আসনের দুই পাশে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচটি ইমাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, বেগম মতিয়া চৌধুরী ও ড. আবদুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে একজন নেতা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দলের মনোনয়ন বোর্ড আছে। সময়মতো সেই বোর্ডে এ নিয়ে আলোচনা হবে। তার আগে তৃণমূলে ঐক্যপ্রক্রিয়া জোরদার করতে নেতাদের নির্দেশ দেন তিনি।

বৈঠকে জাতীয় সম্মেলন নিয়ে কথা বলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যথাসময়েই (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) সম্মেলন হবে। এ নিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ছাড়া বৈঠকে ১৯ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ, ২১ ফেব্রুয়ারি ও ৭ মার্চের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares