বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা না দিয়ে সরকার ‘মানবাধিকার বিবর্জিত’ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


rafiq প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৭, ২০১৯, ০৫:০২ / ২২৭
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা না দিয়ে সরকার ‘মানবাধিকার বিবর্জিত’ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিশেষ সংবাদ দাতা   বিশেষায়িত হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা না দিয়ে সরকার ‘মানবাধিকার বিবর্জিত’ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। : তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এখন হাসপাতালে, অত্যন্ত অসুস্থ। আমরা বার বার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গেছি, অনুরোধ করেছি যে, তাঁকে (খালেদা জিয়া) তাঁর পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হোক। সেখানে তাঁকে পাঠায়নি। পিজি হাসপাতালে নিয়েছে। এটি সরকার নিয়ন্ত্রিত হাসপাতাল। সরকার যা চাইবে, সেভাবে পিজি হাসপাতালকে কাজ করতে হবে। সেখানে তাঁর (খালেদা জিয়া) যে সুষ্ঠু সঠিক চিকিৎসা হবে এটা আমরা মনে করি না। গতকাল শনিবার দুপুরে পুরানা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ে কমরেড মনি সিং মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির এই চতুর্থ জাতীয় কাউন্সিলের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এই কাউন্সিলে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক দলের চেয়ারম্যান হিসেবে পুূনর্নির্বাচিত হন। পরে পুনর্নির্বাচিত চেয়ারম্যান দলের মহাসচিব হিসেবে এম এম আমিনুর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নুরুল কবির ভুঁইয়ার নাম ঘোষণা করেন। আগামী ৯৬ ঘন্টার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানান  সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি প্রতিষ্ঠা হয়। বক্তব্যের শুরুতে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে চতুর্থবারের মতো কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় তাকে গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। : মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এমন পর্যায়ে গেছে যে, এখন তিনি হাঁটতে পারেন না, তিনি কোনো কিছু খেতে পারছেন না। দেশের তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধী দলীয় নেতা তাঁকে এভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এই নির্যাতন আমরা মনে করি এটা মানবাধিকার বিবর্জিত। দেশে কোনো রাজনীতি নেই বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী চলছে এ বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। খুব সোজা কথায় সরাসরি যে কথাটা বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের রাজনীতিকে কবর দেয়া হয়েছে। নো পলিটিক্স ইন দিস কান্ট্রি, কোনো রাজনীতি নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, বাংলাদেশকে রাজনীতিহীন করার জন্য, বিরাজনীতিকীকরণ করার জন্য অনেক আগে থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে এবং সেই ষড়যন্ত্রটা শুরু হয়েছে ১/১১-এর আরো আগে থেকে। আমার ধারণা, ২০০১ সালে জোটের সরকার যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসছে তারপর থেকেই এই চক্রান্ত কার্যকরভাবে শুরু হয়েছে। যারই ফলশ্রুতি হিসেবে আমরা ১/১১ দেখতে পেয়েছি। : তিনি বলেন, ১/১১’র যে সরকার এসেছিলো- সেটা একটা অস্বাভাবিক বেআইনি সরকার এসছিলো। বাংলাদেশের সংবিধানে এই ধরনের সরকার আসার কোনো সুযোগ ছিলো না এবং আমরা এটাও জানি, ওই সুযোগ সৃষ্টি করবার জন্য আজকে যারা ক্ষমতায় আছে জোর করে, তারা কিন্তু দীর্ঘ আন্দোলন করেছে, আন্দোলন করে পেছনের দরজার দিয়ে এই সরকার এসছে ১/১১ তে। আপনাদের মনে থাকার কথা তখন কিন্তু তাদের দলের সভানেত্রী আজকের জোর করে ক্ষমতায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেছিলেন- এই সরকার (১/১১ সরকার) আমাদের আন্দোলনের ফসল। আমরা কেউ ভুলে যাইনি। আমরা এটাও ভুলিনি যে, ১৯৮২ সালে হোসেইন মো. এরশাদ সাহেব যখন সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে ক্ষমতা দখল করলেন একটা নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার সাহেবকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তখন তারা (আওয়ামী লীগ) বলছেন, উই আর নট আনহ্যাপী। : বিএনপি মহাসচিব বলেন, একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছি যে, আমরা এমন রাষ্ট্র ব্যবস্থা চাই, যে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক অধিকার থাকবে সকলের, মৌলিক অধিকার থাকবে, কথা বলতে পারবে, ভোট দিতে পারবে, সংগঠন তৈরি করতে পারবে, একে অপরের প্রতি সহনশীল হবে, কেউ খারাপ কাজ করলে, অন্যায়-দুর্নীতি করলে পার্লামেন্টে তা নিয়ে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে, ন্যায়-বিচার ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে। আজকে আমরা কী দেখছি? সমস্ত কিছুই ধবংস করে দিয়েছে। আমরা জানি যে, বন্যবরাহ থাকে তারা যদি কোনোক্রমে ফসলের ক্ষেতে ঢুকে পড়ে সেই ক্ষেত ধ্বংস করে দিয়ে যায়। আজকে সেই ধরনের একটা বন্যবরাহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমাদের একাত্তর সালের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। : বিএনপির বিরুদ্ধে একটা মামলাও মিথ্যা নয়- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা কি মানুষ বিশ্বাস করবে? এই যে আমি, নজরুল ইসলাম খান ভাইসহ অনেকে বসে আছি। আমাদের বিরুদ্ধে সেদিন মামলা হয়েছে, ওইদিন আমরা ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) একটি মামলার শুনানিতে হাইকোর্টে ছিলাম। ওই সময় খবর আসলো আমিসহ স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্যের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা হয়েছে। যার কোনো ভিত্তিই নেই। হাতিরঝিলে ঘটনাই ঘটেনি, মামলা। ওই মামলার রেশ ধরে গোটা বাংলাদেশের ৪ থেকে ৫ হাজার গায়েবি ও মিথ্যা মামলা হয়েছে। দেখা গেলো যে, ওই মামলা দিয়েই নির্বাচন (৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন) জয় করে ফেললো। অর্থাৎ ওই মামলা দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার-আটক করা, তাড়িয়ে বেড়ানো, বাড়িতে থাকতে না দেয়া এবং নির্বাচনের প্রচারণায় আসতে না দেয়া- এই কাজটা অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে করছেন তারা। কয়েকদিন আগে থেকে আরো মারাত্মকভাবে করলেন যে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি অফিস নিজেরাই আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুলিশ উল্টো বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। সারাদেশের মানুষ জানে যে, মামলাগুলো সত্য না মিথ্যা। : তিনি আরো বলেন, এই সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে যারা চক্রান্ত করছে তাদের সাথে আপোস করে ক্ষমতায় টিকে আছে। আজকে আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, দেউলিয়া হয়ে গেছে। কিভাবে টিকে আছে? বন্দুকের নল দিয়ে জোর করে আজকে ক্ষমতায় টিকে আছে। এভাবে জোর করে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। বিশ্বের ইতিহাস তাই বলে। আজকে বেআইনিভাবে ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন এবং মানবাধিকারকে লঙ্ঘন করেছেন। : অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের অনেকের মধ্যে দেখি যে, একটা হতাশার সুর আসে। কেন, কি হয়েছে? এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে গেছে সেজন্য আমরা কী পরাজিত হয়েছি? কখনোই না। আমরা এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি, কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করছি, সমৃদ্ধির জন্য সংগ্রাম করছি। আমাদের এই সংগ্রামে সমস্ত জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। সেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা অবশ্যই অপ্রতিরোধ্য একটি আন্দোলন গড়ে তুলবো, যে  আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই যে পাথর আমাদের বুকে চেপে বসে আছে, একটা দানব এসে গেছে, সেই দানবকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হবো বলে আমরা বিশ্বাস করি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও দেশনেত্রীর মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তুলতে কল্যাণ পার্টিসহ সকল গণতান্ত্রিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান মির্জা ফখরুল। আমরা যে ঐক্য সৃষ্টি করেছিলাম। একদিকে ২০ দলীয় ঐক্যজোট ও আরেক দিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আমাদের মধ্যে কোথাও কোনরকম সমস্যা নেই। আমরা এক ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছি, যে লক্ষ্যের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারবো। : প্রধান আলোচকের আলোচনায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছিলাম সেই গণতন্ত্র আজ আর নেই। গণতন্ত্রের বাহন হল নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক সমাজে জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেন। তারা সরকার চালায়। কিন্তু আমরা সবাই জানি গত ৩০ তারিখের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে। এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয় নাই। ভোট দিয়েছে কিছু সরকারি কর্মচারী আর আওয়ামী লীগের কর্মীরা। আর তাদের পাহারা দিয়েছে পুলিশ, বিজিবি এবং র‌্যাব। : তিনি বলেন, নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয় নাই। ফলে আজকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। আর যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়ে ক্ষমতায় থাকেন, তাদেরকে বৈধ সরকার বলার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এই যখন অবস্থা, তখন আমাদের ওপর নতুন আরও সমস্যা সৃষ্টি হবে। : বিএনপির এই নেতা বলেন, এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর যিনি আপসহীন লড়াই করেছেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সেই নেত্রী গণতন্ত্রের মা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের ‘মা’ বেগম খালেদা জিয়া আজ চরম অসুস্থ। এত অসুস্থ হওয়ার কথা ছিল না তাঁর। তাঁকে একটি পরিত্যক্ত কারাগারে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে রাখার কারণেই এবং উপযুক্ত চিকিৎসা না দেয়ার কারণে আজকে তিনি মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। : তিনি বলেন, যখন অন্যায়ভাবে ‘আমার মাকে’ বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়। তখন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা গর্জে ওঠা ছাড়া আর কোনো বিকল্প আমি দেখি না। : কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য আজাদ মাহবুব, মোহাম্মদ ইলিয়াস, সহ-সভাপতি মতিউর রহমান, শাহিদুর রহমান তামান্না, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শাহানা সুলতানা শিলা, শামসুদ্দিন পারভেজ, মাহমুদ খান প্রমুখ। : :

 

ব্রেকিং নিউজ :
Shares