ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় জমজমাট হয়ে উঠছে এতিমখানা বাণিজ্য, বাবা-মা বেঁচে থাকলে ও সন্তান এতিম!  


rafiq প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৯, ২০২২, ১৪:৫৮ / ২৫৬
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় জমজমাট হয়ে উঠছে এতিমখানা বাণিজ্য, বাবা-মা বেঁচে থাকলে ও সন্তান এতিম!  

বাবা-মা বেঁচে থাকতেও সন্তান এতিম! স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাত করে চলছে এতিমখানা বাণিজ্য

শাহিনুর বেগম রুনা বিশেষ প্রতিনিধি বিডি সংবাদ ৭১  নেই কোনো এতিম শিশু, তবুও চলছে এতিমখানা। বাবা-মা বেঁচে থাকতেও এবং ভরপোষনের খরচ চালানোর পরেও ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এতিমখানার নামে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় চলছে বাণিজ্য। এতিম শিশুদের নামে দেয়া সরকারি বরাদ্দের টাকা ডুকছে প্রভাবশালী একটি মহলের পকেটে। সরকারি এ বরাদ্দের টাকা স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগসাজশে আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব প্রভাবশালীদের মধ্যে এতিমখানার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ উঠে এসেছে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির নাম। আর দীর্ঘদিন ধরে এদের হাত করে চলছে রমরমা এতিমখানা বাণিজ্য। যার ফলে সরকারি বরাদ্দের টাকা পেয়েও নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এতিম শিশুরা। এতিমদের দূর্দশা ঘোচাতে সরকারের আন্তরিক পদক্ষেপ থাকলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহলের পায়তারায় তা বাস্তব রূপ পাচ্ছে না।
ফরিদপুর জেলায় সরেজমিনে গিয়ে এসব অনিয়ম-দূর্নীতির চিত্র দেখা গেছে। অনিয়মের মাপকাঠিতে প্রথম সারিতেই রয়েছে আলফাডাঙ্গা উপজেলার ইউসুফেরবাগ গোরস্থান মাদ্রাসা ও এতিমখানা। এখানে বর্তমানে ৪৪ জন এতিম-অসহায় শিশুর নামে সরকারি বরাদ্দ আসছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৪৪ জনের বরাদ্দ পেতে এতিমখানায় অন্তত ৮৮ জন এতিম-অসহায় শিশু থাকা বাঞ্ছনীয় এবং তাদের ভরনপোষণের ব্যবস্থা করবে এতিমখানার পরিচালনা পর্ষদ। তবে এই এতিমখানাটির বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এখানে ৮৮ জন এতিম-অসহায় শিশু থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হাতেগোনা কয়েকজন এর বেশি নয়। এদিকে প্রায় সকল শিশুরাই বাড়ি থেকে টাকা এনে এতিমখানায় থাকা খাওয়ার খরচ যোগাচ্ছে, যা নিয়ম বহির্ভূত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউসুফেরবাগ গোরস্থান মাদ্রাসা ও এতিমখানার মুহতামিম শরফুদ্দিন মোল্লা জানান, এতিম ছাড়াই বাড়তি বরাদ্দ নিতে তিনি দ্বিমত পোষন করেছিলেন কিন্তু এতিমখানার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা তার কথা শোনেননি। এতিম না থাকায় পূর্বের বরাদ্দের থেকে এবার ছয়জনের বরাদ্দ কম পেয়েছেন বলেও যোগ করেন তিনি।
এসময় এমন অনিয়ম দূর্নীতিতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কোন হাত আছে কিনা জানতে চাইলে মুহতামিম বলেন, উনারা প্রতিমাসেই আসেন, গতকালকেও এসেছিলেন।
এতিমখানাগুলোতে এমন দূর্নীতি দেখেও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কেন ব্যাবস্থা নিচ্ছেন না তা জানতে চাইলে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক এস এম আলি আহসান বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কোন ভুল আছে কিনা তা আমি খতিয়ে দেখবো।
এ বিষয়ে আরও জানতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ বজলুর রশিদের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে উনি কলটি রিসিভ করেন, এরপর সাংবাদ প্রসঙ্গে তথ্য প্রয়োজন জানতে পেরে তিনি কলটি কেটে দেন। এরপর আরও কয়েকবার কল দেয়া হলেও তিনি কল ধরেননি।
উল্লেখ্য, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার এ এতিমখানাটির এহেন দূর্নীতি অনেক পুরনো। প্রকাশ্য দিবালোকে সকলের সামনেই চলছে এমন দূর্নীতি। এতে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
প্রতিবার বরাদ্দের আগে সমাজসেবা অফিসের লোকজন এতিমখানাগুলোতে গিয়ে এতিম ও অসহায় শিশুদের হিসাব মিলিয়ে বরাদ্দ নিশ্চিত করে। এক্ষেত্রে ইউসুফেরবাগ গোরস্থান মাদ্রাসা ও এতিমখানার বরাদ্দ দেয়ার আগে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সেখানে গিয়ে এতিমখানার পরিচালনা পর্ষদের দেয়া তথ্য যাচাই করেছেন এটাই স্বাভাবিক। এবার প্রশ্ন আসছে, কোন রহস্যের টানে এতিমখানাটিতে পর্যাপ্ত এতিম না থাকার পরেও সমাজসেবা অফিস থেকে তাদের বরাদ্দ দেয়া হল? আরও প্রশ্ন উঠেছে, এতিমখানাটির প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ টাকার দূর্নীতি চিত্র দেখেও কেন না দেখার ভান করছে স্থানীয় সাংবাদিকেরা, টাকাগুলো যাচ্ছেইবা কোথায়? আর প্রশাসনই বা কেন এমন দূর্নীতি দেখেও নিশ্চুপ?

ব্রেকিং নিউজ :
Shares