নারীদের উন্নয়নেে নারীদেরকেই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে- আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী।


rafiq প্রকাশের সময় : মার্চ ১০, ২০১৯, ০৪:০৬ / ১৯১
নারীদের উন্নয়নেে নারীদেরকেই  সক্ষমতা অর্জন করতে হবে- আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী।

বিশেষ সংবাদ দাতা বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে সমাজের সর্বস্তরে পুরুষের পাশাপাশি তাদের সমাধিকার নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নারী সমাজকে নিজের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে নিজেদেরই সক্ষমতা অর্জনের আহবান জানিয়েছেন।
আমাদের মেয়েরা এখন সব জায়গায় এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাকরি-বাকরি, খেলাধুলা সব ক্ষেত্রে তারা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। আগামীতে নারীরা বিমান বাহিনীতে ফাইটার জেট চালাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার আইনে আমরা এক তৃতীয়াংশ নারী আসনের ব্যবস্থা করেছি। ইউনিয়ন এবং উপজেলাসহ সব জায়গায় একজন চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি বলেন, যদিও ক্ষমতা দিয়েছি তবুও তারা সব জায়গায় ক্ষমতাটি প্রয়োগ করতে পারেন না। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের নিজেদের ক্ষমতাটা নিজেদের অর্জন করে নিতে হবে। কেউ (ক্ষমতা) কখনও হাতে তুলে দেয় না, এটা হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখত হবে- শুধু আইন করলেই নারীর প্রতি সহিংসতা এবং বৈষম্য দূর হবে না। এজন্য সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্তভাবে দরকার। এক্ষেত্রে আমাদের সকলের মা-বোনেরা যেখানে যারা আছেন সকলকেই এক হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, একটা সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয় আর সেই সমাজের যেখানে অর্ধেকই নারী, তাদেরকে বাদ রেখে একটা সমাজ কখনও গড়ে উঠতে পারে না। কাজেই সেক্ষেত্রে সকলকে এক হয়ে কাজ করা- এটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্বাধীনতার পর সংবিধানে মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত নারী আসন দেন। তিনি মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আগে জুডিশিয়াল সার্ভিসে কোনো নারীর চাকরির সুযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধু এই আইন বাতিল করে দিয়েছেন। ওই সময় নাজমুন আরা ছিলেন জেলা জজ। আমরা ক্ষমতায় এসে তাকে হাইকোর্টে নিয়ে আসি।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন অনেক ধর্মীয় নেতা নারী শিক্ষার বিরোধিতা করেন। আমি তাদের বলতে চাই বিবি খাদিজা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তিনিই প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কোনো পুরুষ তখন সাহস করেননি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে এখন অনেক নারী কাজ করেন। এমনিতে নারী পাইলট আছেন। আগামীতে বিমান বাহিনীতে ফাইটার জেট চালাবেন তারা। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে একসময় মেয়েদের জায়গা ছিল না। ৯৬’ সালে আমি এসে সব চালু করে দেই। এছাড়া আমি প্রথম কয়েকজন নারীকে সচিবের পদমর্যাদা দেই। জেলা ডিসি, এসপির পদে মেয়েদের বাধা ছিল। এরপর আমি যাকে প্রথম নারী এসপি করে মুন্সীগঞ্জে আনলাম। তিনি দায়িত্ব নিয়েই ডাকাত ধরে ফেললেন। তার এ কাজের সঙ্গে আমিও জয়ী হয়ে গেলাম। মেয়েরা খেলাধূলায়ও অনেক এগিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
শিশু এবং নারী ধর্ষণকে অত্যন্ত গর্হিত একটি অপরাধ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় ধর্ষিতা নারীর পরিচয় গোপন রেখে ধর্ষণকারিকে সমাজের সকলের কাছে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, যারা (ধর্ষণ) করে তাদের প্রতি ঘৃণা এবং আমি বলবো তাদের নাম, পরিচয় ভালভাবে প্রচার করা কর্তব্য, যাতে করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তাকে ঘৃণার চোখে দেখে। তাছাড়া আইগত ব্যবস্থাতো তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবেই।
এ সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে তার সরকার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, এটা কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, উন্নত সভ্য দেশেও এই সমস্যা রয়েছে। কাজেই এর বিরুদ্ধে আরো জনমত সৃষ্টি করা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কন্যা শিশুরা যেন কোনভাবেই বৈষম্যের শিকার না হয় সেই সচেতনতাটা আমাদের সমাজে ইতোমধ্যেই এসে গেছে। আর আমি এটাই মনে করি সমাজকে গড়ে তুলতে হলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই একান্তভাবে কাজ করা দরকার।
‘বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি চিরকল্যাণ কর, অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’ কাজী নজরুলের কবিতার এই পংক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সমঅধিকার সেই অধিকারের কথা তিনি স্পষ্টভাবে বলে গেছেন। কাজেই সমাজ ও দেশেকে কল্যাণময় করতে হলে নারী-পুরুষের একসঙ্গে কাজ করাটা জরুরি।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি মিয়া সেপো বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার

ব্রেকিং নিউজ :
Shares