জাতির এক শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ্


rafiq প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮, ০১:১৬ / ২৭২
জাতির এক শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ্

 

জসিম মাহমুদ  সিনিয়র রিপোর্টার ——————- মন্তব্য প্রতিবেদন

১২ইডিসেম্বর, ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়!২০১৩ সালের এই দিনে আমরা হারিয়েছি জাতির এক শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ্

কে!

##এক নজরে
শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা রাহিমাহুল্লাহ্ ……

১৯৪৮ সালের ২ ডিসেম্বর শহীদ আবদুল কাদের
মোল্লা ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার জরিপারডঙ্গী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তাঁর বাবা সোনাউল্লাহ মোল্লা সদরপুর উপজেলা সদরের কাছে আমিরাবাদ গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তিন ভাই ছয় বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেঝো। তাঁর ছোট ভাই মঈন উদ্দিন মোল্লা ভাসানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। উল্লেখ্য, শহীদ আবদুল কাদের মোল্লাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেফতারের পর স্থানীয় ইউনিয়নের বাসিন্দারা তার ছোট ভাই মঈন উদ্দিন মোল্লাকে জোর করে চেয়ারম্যান পদে দাঁড় করিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেন।

#শিক্ষাজীবন:-
আবদুল কাদের মোল্লার শিক্ষা জীবনের শুরু
জরিপারডঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বরাবরই তিনি ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। তিনি যথাক্রমে ১৯৫৯ ও ১৯৬১ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বৃত্তি লাভ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে আমিরাবাদ ফজলুল হক
ইন্সটিটিউট থেকে প্রথম শ্রেণীতে মাধ্যমিক
পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। এরপর তিনি একই জেলার রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি
হন। কৃতিত্বের সাথে ১৯৬৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ১৯৬৮ সালে তিনি একই কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। এরপর তিনি শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। মুক্তিযুদ্ধের কারণে ১৯৭১ সালে তার মাস্টার্স পরীক্ষা দেয়া হয়ে ওঠে নাই। তিনি গ্রামের বাড়ি চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেন। ১৯৭৫ সালে তিনি সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষা প্রশাসনের ডিপ্লোমায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে
১৯৭৭ সালে তিনি শিক্ষা প্রশাসন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এখানেও তিনি প্রথম শ্রেণীতে
প্রথম হন।

#কর্মজীবন:-
জনাব মোল্লা তার ছাত্র জীবন
থেকেই শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। ১৯৭৭
সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত
ঢাকার বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর এম এড পরীক্ষার রেজাল্টের পরে তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকে তিনি ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে সংস্কৃতি কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে রিসার্স স্কলার হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী সেন্টারে যোগ দেন। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৮১ সালে জনাব মোল্লা বহুল প্রচারিত দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। জনাব মোল্লা একজন উত্তম সমাজসেবক। ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে তিনি পরপর দুই বছর তৎকালীন অভিন্ন ঢাকা ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (ডি ইউ জে) এর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

#রাজনৈতিক_জীবন:-
শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার রয়েছে
সংগ্রামী রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। অষ্টম শ্রেণীতে
অধ্যায়নকালেই তিনি কম্যুনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং কম্যুনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরে তিনি বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ মাওলানা মওদূদী লিখিত তাফহীমুল কুরআনের সাথে পরিচিত হন। আগ্রহের সাথে তিনি এ গ্রন্থ পড়তে থাকেন। তাফহীমুল কুরআনের হৃদয়স্পর্শী ছোঁয়ায়
ইসলামের প্রতি প্রবল আকর্ষিত হয়ে ছাত্রজীবন
শেষে ১৯৭৭ সালের মে মাসে তিনি বৃহত্তর
ইসলামী আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশে যোগ দেন এবং ১৯৭৮ সালের
নভেম্বর মাসে রুকন (সদস্য) শপথ নেন। অতঃপর
তাকে প্রবীণ বর্ষীয়ান নেতা জামায়াতে ইসলামী
সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের
ব্যক্তিগত সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়া
হয়। তিনি জামায়াত ঢাকা মহানগরীর শূরা সদস্য ও কর্মপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। অল্পদিনের ব্যবধানে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিস-এ-শূরার সদস্য হন। ১৯৯২ সালে তাকে ঢাকা মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারির দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা মহানগরীর নায়েব-এ-আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৫ সালে জনাব মোল্লা জামায়াতে
ইসলামী ঢাকা মহানগরীর আমীর নির্বাচিত হন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য হন। ১৯৯১ সালে তাকে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং উক্ত দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সাথে পালন করতে থাকেন। ২০০০ সালে তাকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব দেয়া হয়। উক্ত দায়িত্বের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে তিনি চার দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

#নির্যাতিত_জীবন :-
শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা সরকারের
স্বৈরাচারী আচরণের প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন মেয়াদে চারবার কারাবরণ করেন। আইয়ুব সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের দায়ে ১৯৬৪ সালে প্রথমবারের মতো তিনি গ্রেফতার হন। বিনা উস্কানিতে ১৯৭২ সালে তিনি আবার গ্রেফতার হন। কিন্তু স্থানীয় জনতার বিক্ষোভের মুখে পুলিশ তাকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন কাস্টোডি থেকেই ছেড়ে দিতে বাধ্য
হয়। জেনারেল এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কারণে আবদুল কাদের মোল্লাকে আবারও আটক করে রাখা হয়। পরে উচ্চ আদালত তার এ আটকাদেশকে আবৈধ ঘোষণা করলে চার মাস পরে তিনি মুক্ত হন। শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা ১৯৯৫ সালে কেয়ারটেকার সরকার আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সর্বদলীয় লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য হিসেবে
তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ
নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করায়
তৎকালীন বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে আটক করে। এছাড়া ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

২০১০ সালের ১৩ জুলাই সুপ্রিম
কোর্ট এলাকা থেকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার
করা হয়। তারপর ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর
কেরানীগঞ্জ থানার এবং ২০০৮ সালে পল্লবী
থানায় করা মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা মামলায় তাঁকে
শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়। ১৮ ডিসেম্বর
২০১১ সালে আদালতে ৬টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনালের
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেয়া হয়। পরে
তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের চাপ অনুযায়ী
সরকারকে আপিলের সুযোগ দিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি
২০১৩ সালে আইন সংশোধন করা হয়। ৩ মার্চ ২০১৩ সরকারের আপিল। ৪ মার্চ ২০১৩ সালে কাদের মোল্লার আপিল। আপিলের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করা হয় ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩। আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয় ৯ ডিসেম্বর ২০১৩।

ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয় ১০ ডিসেম্বর ২০১৩। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত হয় ১০ ডিসেম্বর রাত ১০টা। রিভিউ আবেদনের শুনানি খারিজ হয় ১২ ডিসেম্বর ২০১৩। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ রাত ১০টা ১ মিনিট।

#রেখে_যাওয়া_স্মৃতি:-
শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি দেশ বিদেশের সমসাময়িক বিষয়ের উপর কলাম ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তার সুচিন্তিত কলাম ও প্রবন্ধ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও বস্তুবাদ, কম্যুনিজমের উপরে তার বৈজ্ঞানিক সমালোচনা শিক্ষিত মহলের কাছে সমাদৃত হয়েছে।
শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা সৌদি আরব, সংযুক্ত
আরব আমিরাত, জাপান, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান ও ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশ সফর করেছেন। শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা বেগম সানোয়ার জাহানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুই পুত্র ও চার কন্যা স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন তাঁর শাহাদাত কবুল করুন। আমীন।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares