চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসন বড় দুই জোটে ৩২ প্রার্থী চূড়ান্ত


rafiq প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৯, ২০১৮, ২২:২৪ / ২৭১
চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসন বড় দুই জোটে ৩২ প্রার্থী চূড়ান্ত

রফিক চৌধুরী—- বিডি সংবাদ৭১————–
সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে ৩২ প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এরা আগামী ৩০ ডিসেম্বর চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। এবার নতুন মুখের প্রাধান্য পেয়েছে ২০ দলীয় জোটে। এ জোটে নয়জনই নতুন মুখ। বাদ পড়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও চারবারের সংসদ সদস্য এম মোরশেদ খান। মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েলও। তিনি দুইবার পটিয়া আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ জোটে মামলা ও ঋণখেলাপের কারণে নির্বাচনে মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর।
২০ দলীয় জোটে নতুন মুখের প্রাধান্য থাকলেও তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা গেছে আওয়ামী লীগে। দলটি চট্টগ্রামের ১৫টি আসনে আগের প্রার্থীদের এবারও মনোনয়ন দিয়েছে। নতুন মুখ ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম-৯ আসনে। আওয়ামী লীগে এবারও মনোনয়নবঞ্চিত হন প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিসহ দলের অনেক সিনিয়র নেতা।
চট্টগ্রামের প্রতিটি আসনে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বড় দুই জোটের মধ্যে। কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনে ফ্যাক্টর হয়ে ওঠতে পারেন ইতোমধ্যে এমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে মহজোটের শরিক দলগুলোকে তিনটি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অবশিষ্ট ১৩টি আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এবার আওয়ামী লীগ একটি মাত্র আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী ও বাকলিয়া) আসনে প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবার আওয়ামী লীগের নতুন মুখ। অপর ১৫টি আসনে ২০১৪ সালের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মহাজোটের শরিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসন তিনটির প্রার্থীরা হলেন, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ) আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল। তবে এবার মহাজোটের শরিক জাতীয়পার্টির প্রার্থী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু চট্টগ্রাম থেকে মনোনয়ন পাননি। গতবার তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
একের পর এক নাটকীয়তাশেষে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে চূড়ান্ত করা হয়েছে ২০ দলীয় জোটের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা। মনোনয়নপত্র বিতরণ থেকে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি পর্যন্ত দফায় দফায় বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। শেষ পর্যায়ে এসে দলটি চট্টগ্রামের ৪টি আসন জোটের শরিকদের ছেড়ে দিয়ে ১২টিতে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। শরিকদের ছেড়ে দেওয়া আসনগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) ও চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) আসন দুইটি এলডিপি, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন জামায়াত এবং চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ) আসনটি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। এর আগে শুক্রবার রাতে আসন বণ্টন নিয়ে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে নাটকীয়তা ছিল। রাঙ্গুনিয়া আসনে কারাবন্দী বিএনপি নেতা অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহারকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হলেও ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তা পরিবর্তন করে আসনটি এলডিপিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ আসনে এলডিপির প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল আলম। সীতাকু- আসনে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয় উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইসহাক কাদের চৌধুরীকে। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ) আসনে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক। চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য জামায়াতে আ ন ম শামসুল ইসলাম মনোনয়ন পেয়েছেন। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) আসনে নাটকীয়ভাবে শনিবার গভীর রাতে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান। বাদ পড়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য এম মোরশেদ খান। একই সময়ে মনোনয়ন পান সন্দ্বীপ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশাও।
চট্টগ্রামে মহাজোট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা হলেন : চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) : গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং ২০ দলীয় জোটের সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) : মহাজোটের শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারী এবং ২০ দলীয় জোটে পিজিআর-এর সাবেক প্রধান ও বিএনপি নেতা কর্নেল (অব.) মো. আজিম উল্লাহ বাহার।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) : মহাজোটে আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান মিতা এবং ২০ দলীয় জোটে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-) : মহাজোটে আওয়ামী লীগের দিদারুল আলম এবং ২০ দলীয় জোটে উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইসহাক কাদের চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ) : মহাজোটের শরিক জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) : মহাজোটে রেলপথ মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এবং ২০ দলীয় জোটে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সিকদার।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) : মহাজোটে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং ২০ দলীয় জোটে এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি মো. নুরুল আলম।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) : মহাজোটের শরিক জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল এবং ২০ দলীয় জোটে মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) : মহাজোটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) : মহাজোটে সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের ডা. আফসারুল আমীন এবং ২০ দলীয় জোটে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট) : ২০ দলীয় জোটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং মহাজোটে আওয়ামী লীগের এমএ লতিফ।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) : মহাজোটে আওয়ামী লীগের সামশুল হক চৌধুরী এবং ২০ দলীয় জোটে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) : মহাজোটে ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং ২০ দলীয় জোটে সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) : মহাজোটে আওয়ামী লীগের মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম।
চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) : মহাজোটে আওয়ামী লীগের আবু রেজা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নদভী এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) : ২০ দলীয় জোটে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এবং মহাজোটে আওয়ামী লীগের মোস্তফিজুর রহমান চৌধুরী

ব্রেকিং নিউজ :
Shares