ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’ নিয়ে দেশের উপকূলীয় প্রশাসন সতর্ক


rafiq প্রকাশের সময় : মে ২, ২০১৯, ০৫:০৮ / ২০০
ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’ নিয়ে দেশের উপকূলীয় প্রশাসন সতর্ক

বিশেষ সংবাদ দাতা ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’ নিয়ে দেশের উপকূলীয় প্রশাসন সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। ৭১০কিরোমিটার উপকূলীয় এলাকায় রেডক্রিসেন্ট-এর ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী-সিসিপি’র আওতাভূক্ত সবগুলো উপজেলা এবং ইউনিট থেকে প্রায় ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে এ ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে আগাম সতর্কতা প্রদান করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনই আতংকিত হবার কিছু নেই বলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। সূত্রটির মতে, আবহাওয়া বিভাগের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে এ ঝড়ের গতি প্রকৃতি সম্পর্ক সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সার্বক্ষনিকভাবে জেলা প্রশাসনগুলোকে অবহিত করা হচ্ছে। সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকদের যেকোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে অতি স্বল্প সময়ের নোটিসে এসব স্বেচ্ছা সেবকগন অতীতের মত উপকূল জুড়ে সতর্কবার্তা প্রদান সহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা সহ যেকোন ধরনের উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেবে। তবে বিষয়টি নিয়ে কোন ধরনের আতংক না ছড়ানোর জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সহ জেলা প্রশাসন থেকে সবার কাছে অনুরোধ জানান হয়েছে। তাদেও মতে ঘূর্ণিঝড় ফনি’র গতিপথ পর্যালোচনায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য তেমন কোন বিপদের শঙ্কা নেই। তবুও সরকার বসে নেই। তবে আতংকেরও কিছু নেই। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ও উপকূলীয় জনগণের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে বলেও মনে করছে মন্ত্রণালয়।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে ঘূর্ণিঝড় ফনি বরিশালে পায়রা বন্দর থেকে ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। পায়রা সহ সবগুলো সমুদ্র বন্দরকে ৪নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর/উত্তরÑপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

এদিকে ‘জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার’এর বিশ্লেষণে এ ঝড় ভারতের অন্ধ্র হয়ে উড়েশ্যা পারি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপক’লও অতিক্রম করতে পারে। তবে তাতে শুক্র বা শনিবারও লেগে যেতে পারে। পাশাপাশি এ ঝড়ের গতি পথ আরো পরিবর্তিত হলে তা বাংলাদেশ উপক’লের জন্যও দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মনে করছেন আবহাওয়াবীদগন। তবে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

গত শনিবার দক্ষিন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফনি ২০০৭সালের ১৫নভেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিন উপক’লে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’এর প্রায় অনুরূপ। সিডরের তীব্রতা ছিল সোয়া ২শ কিলোমিটার। ফনি স্ববেগে আঘাত হানলে তার তীব্রতাও ২শ কিলোমিটারে কাছে পৌছতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের মতে ১৮৯১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরে ১৪টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলেও ১৯৯১-এর ২৯এপ্রিল ও ২০০৮সালের এপ্রিলে ঘূর্ণিঝড় ‘নার্গিস’ উপক’ল অতিক্রম করে। ভারতীয় আবহাওয়া বীদদের মতে ফনি শুক্রবার দপুরের পরে পুড়ি’র দক্ষিনে গোপালপুর ও চাঁদবালীর মধ্যবর্তি উপক’লীয় এলাকা অতিক্রম করার সম্ভবনা রয়েছে। সম্ভাব্য আঘাত হানা ভারতীয় উপক’লীয় এলাকায় প্রায় ১০কোটি মানুষের বসবাস বলে শংকিত সেখানের মানুষ সহ প্রশাসন।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফনির গতি ও অবস্থান নিয়ে সার্বক্ষনিক নজরদারী অব্যাহত রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তরও। বুধবার সন্ধা ৬টায় ফনি ১৪.৮ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৩.৯ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছিল। যা পূর্ববর্তি ১২ঘন্টার চেয়ে কিছুটা উত্তর-পশ্চিমে এগিয়েছে।
এদিকে এ ঝড় দেশের উপক’লীয় এলাকা থেকে মেঘ শুষে নিচ্ছে। ফলে সারা দেশেই তাপমাত্রার তীব্রতা স্বাভাবিকের অনেক ওপরে রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম, অথচ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ওপরে। গত মার্চে বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ৪২ মিলিমিটার। যা ছিল স্বাভাবিক ৫৩ মিলিমিটারের চেয়ে ২০%কম। সদ্য সমাপ্ত এপ্রিলে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ১৩২ মিলিমিটার হলেও বাস্তবে মাসের ৩০দিনে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৮৭ মিলিমিটার। অথচ তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের প্রায় ৩ ডিগ্রীরও বেশী ৩৬ডিগ্রী অতিক্রম করেছে। গত ২৪এপ্রিল বরিশালে মওশুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়ার এ অস্বাভাবিক আচরন সাগরে ফনি’র মত বিধ্বশী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করছেন আবহাওয়া পর্যবেক্ষকগন।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares