এরশাদ হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা ‘জাপা সরকারে না থাকায়’ সিনিয়র নেতাদের স্বপ্নভঙ্গ


rafiq প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৪, ২০১৯, ২১:৪৩ / ২০৬
এরশাদ হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা ‘জাপা সরকারে না থাকায়’ সিনিয়র নেতাদের স্বপ্নভঙ্গ

রফিক চৌধুরী———————-আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও জাতীয় পার্টি যে একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হচ্ছে তা নিশ্চিত। সংসদে বিরোধী দলের নেতা হচ্ছেন এইচ এম এরশাদ। আর দলের উপনেতা হবেন ভবিষ্যৎ দলের চেয়ারম্যান বর্তমানে কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ‘জাতীয় পার্টি সরকারে থাকবে না’ এ সংক্রান্ত এরশাদের একটি চিঠি যেন জাতীয় পার্টির কয়েকজন সিনিয়র নেতা নির্বাচিত এমপির মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়েছে। তারা সরকারে থেকে মন্ত্রী হতে চান। দেনদরবার করে অনেকদূর এগিয়েছেন অথচ হঠাৎ দলের চেয়ারম্যানের এই সিদ্ধান্ত তাদের ‘বাড়া ভাতে ছাই’ দেয়ার নামান্তর! এখন এই নেতারা রওশন এরশাদকে স্বামীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে বিরোধী দলের পাশাপাশি দলকে সরকারে রাখা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। এরশাদ সংসদে বিরোধী দলের নেতা হচ্ছেন এই খবরে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা দারুণ খুশি। তারা এরশাদকে চাচ্ছেন সংসদের নেতৃত্বে। এই খুশিতে দীর্ঘদিন থেকে বঞ্ছিত এবং নিবেদিতপ্রাণ বিক্ষুব্ধ নেতারা বৃহস্পতিবার জিএম কাদেরের উত্তরার বাসায় দেখা করতে যান। সেখানে দেখা হয় কুমিল্লা-২ আসনের এমপি আমির হোসেনের সঙ্গে। বিক্ষুব্ধ নেতারা আমির হোসেনকে কিলঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। ‘দালাল দালাল’ বলে তাকে গালিগালাজ করেন। সিনিয়র নেতারা বিক্ষুব্ধ নেতাদের হাত থেকে আমির হোসেনকে রক্ষা করেন। বিক্ষুব্ধ নেতারা জানান, আমির হোসেন মুদি দোকানী থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে এমপি হয়েছেন। কুমিল্লা-২ আসনের এমপি এবারও দলীয় নমিনেশন পান। অথচ তিনি নৌকার প্রার্থীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। কর্মীদের এ ব্যাপারে কিছুই জানাননি। এই ক্ষোভে ওই আসনের দলীয় কর্মীরা পিটুনি দেন আমির হোসেনকে। একজন নেতা সাংবাদিকদের জানান, তারা দশম সংসদের লক্ষিপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ নোমানকে খুঁজছেন। নোমান কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে স্বতন্ত্র একজন প্রার্থীকে সমর্থন করে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের পিটুনির ভয়ে মোহাম্মদ নোমান এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গতকাল দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আমি এই মর্মে জানাচ্ছি যে, একাদশ জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। পদাধিকার বলে জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারী দলের সভাপতি হিসেবে আমি প্রধান বিরোধী দলের নেতা এবং পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের উপ-নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জাতীয় পার্টির কোনো সংসদ সদস্য মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভূক্ত হবেন না। সংসদের মাননীয় স্পীকারকে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এরশাদের এই চিঠি প্রকাশের পর দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দারুণ খুশি। তারা চান এরশাদ সম্মানিত হোক। কিন্তু ‘জাপা সরকারে থাকবে না’ সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পড়েন কয়েকজন সিনিয়র নেতা। যারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে এমপি এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন; এবারও এমপি হয়েছেন তারা এবার মন্ত্রীত্বের জন্য জোর তদবির করছেন। এই নেতারা খবর পেয়েই রওশন এরশাদের বাসায় যান এরশাদকে ঠেকাতে।
বিগত দশম জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকলেও দলের একজনকে মন্ত্রী এবং দুজনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়। রওশন বিরোধী দলের নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টি ২০টি এবং উন্মুক্ত আসন থেকে পায় একটি আসন। মোট আসন ২১। এবারও সরকারের অংশীদার হবে কি না- সেই প্রশ্নে সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দুদফায় বৈঠকে। দলের প্রেসিডিয়াম ও নব নির্বাচিত এমপিদের যৌথ সভা এবং সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের সভায় এ ব্যাপার সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দল। দলের কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের দুদিন আগেও বলেছিলেন, ‘সম্ভাবনার কথা বলা যায় না। সব রকম সম্ভাবনাই আছে। জাতীয় পার্টি সংসদে যাওয়ার পর কারা মন্ত্রিত্ব পাবেন, এ নিয়ে এখনও কিছু ঠিক হয়নি। আমরা এটা নিয়ে পরে মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করব।’ শপথ নেয়ার পর সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠক শেষে জি এম কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সামনে পার্টির একটি মিটিং আছে, সেখানে বসে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। একই বক্তব্য দেন বেগম রওশন এরশাদও। মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাও প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দেন। কিন্তু হঠাৎ শুক্রবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন এরশাদ। এরশাদ ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের কারণে বহু আগেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ আখ্যা পেয়েছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তে দলের পরীক্ষিত ও নিবেদিত নেতাকর্মীরা খুশি। কিন্তু মহাসচিবসহ সিনিয়র ৬ থেকে ৭ জন নেতা হতাশ। তারা মন্ত্রীত্বের জন্য চেষ্টা তদরিব করছেন। জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা বলেন, সুবিধাবাদী নেতারা এরশাদের সিদ্ধান্তে হোঁচট খেয়েছেন। তারা চাচ্ছেন রওশন এরশাদকে ব্যবহার করে সরকার ও বিরোধী দলে দলকে রেখে মন্ত্রী হতে। সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু রওশন এরশাদও স্বামী এরশাদের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন বলে মনে হয় না। তবে এরশাদ তার এই সিদ্ধান্তে অটল থাকেন কিনা সেটাই দেখার জন্য অপেক্ষায় দলের নেতাকর্মীরা

ব্রেকিং নিউজ :
Shares