একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন গুলোকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত।জুন মাসের মধ্যে আহব্বায়ক কমিটি।


rafiq প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৭, ২০১৯, ০৬:২৭ / ১৭৭
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন গুলোকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত।জুন মাসের মধ্যে আহব্বায়ক কমিটি।

ডেস্ক বিডি সংবাদ ৭১

এ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা ৩ মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন। এ সময়ের মধ্যে কমিটি দিতে ব্যর্থ হলে আহ্বায়ক কমিটির কার্যকারিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ঢেলে সাজানের সিদ্ধান্ত হয়। পরে দলের কয়েকটি সভায়ও এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়ার কথা জানান একাধিক নীতিনির্ধারক।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সারা দেশের লাখ-লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দল ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। আর দলকে দ্রুত পুনর্গঠন করে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করতে হবে।’

কমিটি গঠন নিয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনগুলোর নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি দেয়া হবে। ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের দিয়েই কমিটি হবে।’

দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা যুগান্তরকে বলেন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যারা ত্যাগী ও নির্যাতিত তাদের দিয়েই কমিটি গঠন করা হবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব ও প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাবেরও একই প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন করা হয়। দুটি সংগঠনেরই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটিকে ৩ মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে।

দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে সব কমিটি গঠনের আগে প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। এ কমিটি অস্থায়ী। ৩ মাসের মধ্যে এ কমিটিকে কাউন্সিল করে নতুন কমিটি দিতে হবে। আহ্বায়ক কমিটিতে যারা থাকবেন, তারা পরের কমিটিতে থাকতে পারবেন না। কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি দিতে ব্যর্থ হলে আহ্বায়ক কমিটির কার্যকারিতা বাতিল হবে। তবে নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আহ্বায়ক কমিটিকে কিছু নির্দেশনা দেয়া হবে। কোনো কারণে যদি কাউন্সিলের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে কমিটি করা সম্ভব না হয় তাহলে তা হাইকমান্ডকে জানাবেন। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা হবে।

এসব সংগঠনের কোনোটিরই কমিটির মেয়াদ নেই। কয়েকটি সংগঠনের কমিটির মেয়াদ ১ যুগের বেশি অতিক্রম হলেও নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। অনেকগুলো আংশিক কমিটি দিয়েই পুরো মেয়াদ পার করেছে।

রাজনৈতিক অনুকূল পরিবেশ না থাকার অজুহাতে বছরের পর বছর ধরে এসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বহাল তবিয়তে রয়েছে। যে কারণে নতুন কোনো নেতৃত্ব তৈরি হয়নি।

বিএনপির অঙ্গসংগঠনের মধ্যে রয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, মহিলা দল, কৃষক দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস), মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল ও ওলামা দল। আর সহযোগী সংগঠন হচ্ছে- ছাত্রদল ও শ্রমিক দল। এ দুটি সংগঠন স্ব-স্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরামর্শে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে ৭ বছর পর বুধবার জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের ১৫৪ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁতী দল ও কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটিও প্রায় চূড়ান্ত।

এমনকি সারা দেশে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের কোনো পরিসংখ্যানও নেই এসব সংগঠনের কাছে। তবে নতুন কমিটি গঠনে দলের হাইকমান্ডের উদ্যোগের ফলে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরাও সরব হয়ে উঠেছেন। ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের দাবি তাদের।

এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, বছরের পর বছর সংগঠনগুলোর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ থাকায় থমকে রয়েছে সব কার্যক্রম। নেতৃত্ব সংকটের কারণে একদিকে যেমন আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশেও দাঁড়ানো যাচ্ছে না।

বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রদলকে বিবেচনা করা হয়। আবার নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগারও ধরা হয় এ সংগঠনকে। কিন্তু বর্তমান কমিটির মেয়াদ আড়াই বছর আগে শেষ হয়েছে। ফলে মাঠপর্যায়ে সংগঠনটি নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে।

সূত্র জানায়, ডাকসু নির্বাচনের পরপরই ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেয়া হবে। তবে কমিটি সিনিয়র নাকি জুনিয়রদের দিয়ে গঠিত হবে সে বিষয়টি এখনও সুরাহা করতে পারেনি বিএনপি হাইকমান্ড।

বিএনপির আরেক সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দলের ৩৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৪ সালের এপ্রিলে। এ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির মতো ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ।

এ কমিটিকে ১ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা দেয়া হলেও মেয়াদপূর্তির পরও তা পূর্ণাঙ্গ হয়নি। তবে সারা দেশের ৮২টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে ৬১টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং ১৯টি জেলায় আংশিক কমিটি গঠন করতে পেরেছে বর্তমান কমিটি।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে অঙ্গসংগঠনও : ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি দলের মহাসচিব সাইফুল আলম নিরবকে সভাপতি, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর ইশতিয়াক আজিজ উলফাত সভাপতি এবং শফিউজ্জামান খোকনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯১ সদস্য বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির গঠনতন্ত্রে এক ব্যক্তির এক পদ বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নেন শফিউজ্জামান খোকন। পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশে সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানকে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

১৯৯৮ সালের ১৬ মে সম্মেলনে মাধ্যমে মাহবুবুল আলম তারাকে সভাপতি ও শামসুজ্জামান দুদুকে সাধারণ সম্পাদক করে কৃষক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর আর কমিটি হয়নি। ২০০১ সালে মাহবুবুল আলম তারা আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও ইয়াসিন আলীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। মেয়াদ শেষের পরও এ কমিটি আর পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি দায়িত্বশীল নেতারা।

এরপর সিনিয়র সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর কৃষক দলের পদ থেকে ইস্তফা দেন।

২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আফরোজা আব্বাসকে সভাপতি ও সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করার পর এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।

এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে। এ নির্বাচনে নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে প্যানেল দেয়াটাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হল প্যানেল নিয়েও রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ছাত্রদলকে।

২০০৮ সালের ২২ মে তাঁতী দলের কমিটি গঠন হয়। এরপর আর কাউন্সিল হয়নি। ২০০৫ সালে আবদুল মালেককে সভাপতি ও শাহ নেছারুলকে সাধারণ সম্পাদক করে ওলামা দলের কমিটি করা হয়। এরপর ১৪ বছর পার হলেও নতুন কমিটি হয়নি।

২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মামুন আহমেদকে সভাপতি করে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) আংশিক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। ৩০ সদস্যের আংশিক কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করা হয় চিত্রনায়ক হেলাল খানকে। এরপর আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি তারা।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares