আসুন সবাই মিলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি-সোহ্রাওয়ার্দীতে বিজয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী,


rafiq প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২০, ২০১৯, ০৩:৪৪ / ২৫০
আসুন সবাই মিলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি-সোহ্রাওয়ার্দীতে বিজয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী,

রফিক চৌধুরী————————-প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে নিয়ে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন পর গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করেছে। তারা মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে বিজয় ধরে রাখতে হবে। যখন দায়িত্ব পেয়েছি জনগণের সেবা করার, দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য আমাদের সরকার সুষমভাবে কাজ করে যাবে। জনগণের স্বার্থে কাজ করবো। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ আমাদের প্রতি যে আস্থা-বিশ্বাস রেখেছে, প্রয়োজনে নিজের জীবন দিয়ে হলেও জনগণের সেই আস্থা-বিশ্বাসের মর্যাদা আমরা রক্ষা করবো। বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে হিসেবে গড়ে তুলতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আমরা বর্তমানকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য উত্সর্গ করি। যাতে তারা একটি উন্নত ও সুন্দর জীবন পায়।’

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫৭টি আসনে জয় নিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সাফল্য উদযাপন উপলক্ষে গতকাল শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল বিজয় সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। আওয়ামী লীগ এই সমাবেশের আয়োজন করে। ব্যাপক জনসমাগমে সমাবেশটি রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জয়বাংলা শ্লোগান আর ঢাক-ঢোলের বাদ্যে শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, রাজধানী ঢাকার সব পথেই গতকাল ছিল উত্সবের আমেজ। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই সমাবেশে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধ, শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের পক্ষে রায় দিয়েছে। জনগণ ভোট দিয়েছে, তাদের সেই ভোটের সম্মান যাতে থাকে সেটি অবশ্যই আমরা মাথায় রেখে সার্বিকভাবে সুষম উন্নয়ন করে যাব। নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগকে আবারও দেশ সেবার সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা আমাদের কর্তব্য। বিজয় পাওয়া যত কঠিন, সেই বিজয় রক্ষা করে জনগণের জন্য কাজ করা আরও কঠিন। সেই কঠিন কাজের দায়িত্ব পেয়েছি, তা পালন করতে হবে। জনগণের ভোটের সম্মান যেন থাকে সেটা আমাদের নির্বাচিতদের মনে রাখতে হবে। আমাদের ওয়াদা, বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত করবো। আমরা জনগণকে দেওয়া আমাদের প্রতিটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। এ সময় কবি সুকান্তের ভাষায়-এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বিজয় সমাবেশ থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনকে অর্থবহ করেছে। জয়-পরাজয় একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি বলতে চাই আওয়ামী লীগ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে এটা সত্য। তবে এই বিজয় কেবল আওয়ামী লীগের নয়, বর্তমান সরকার সবার জন্য কাজ করবে। সেখানে কোনো দল-মত দেখা হবে না। যাঁরা ভোট দিয়েছেন বা যাঁরা ভোট দেননি তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই- আওয়ামী লীগ সবার জন্য কাজ করবে। উন্নয়নের জন্য কাজ করবে, রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবে।

বিজয় উত্সবে আসার জন্য তিনি সেখানে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ছয় বছর নিজের নির্বাসিত জীবনযাপন এবং দেশে ফিরে মানুষের গণতান্ত্রিক ও ভোট-ভাতের অধিকার আদায়ে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের কথা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনসহ পুলিশ-বিজিবি, আনসারসহ সকল সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি ভোটার ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার জীবনে ব্যক্তিগত কোন চাওয়া পাওয়ার নেই। কী পেলাম বা না পেলাম সেটি বড় কথা নয়, দেশের মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম সেটাই আমার কাছে সব চেয়ে বড় কথা। তাই বাংলাদেশের একটি মানুষও ক্ষুধার্ত থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। সবাই চিকিত্সা পাবে, তরুণেরা কর্মসংস্থান পাবে। বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, লক্ষ্য।

বিজয় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা আবু কাউসার, যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা আক্তার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জাতীয় পার্টির (জেপি), গণআজাদী লীগ, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারাও সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় মূলমঞ্চে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও নতুন মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ এবং উপদেষ্টা পরিষদের অধিকাংশ নেতাই উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে নারী নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো।

বেলা ৩টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে এবং পেছনের ব্যানারে সাজানো দলের এবারের ইশতেহারের মলাটের রঙে সুদৃশ্য ও নান্দনিক সুবিশাল মঞ্চে উপস্থিত হন, তখন ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অনেক ঘটনার সাক্ষী ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বৈঠাসহ ছোট বড় ৪০টিরও বেশি নৌকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ফেস্টুনে বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছিল সমাবেশের মাঠ। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে আসার পর শুরু হয় সমাবেশের মূল আনুষ্ঠিকতা। জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম ‘শুকরিয়ারে শুকরিয়া, কোটি কোটি শুকরিয়া/ বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়া’ গানটি গাওয়ার সময় মঞ্চে আসেন শেখ হাসিনা। পরপর তাঁর তিনটি গানের সঙ্গে সুর মেলান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জনসমুদ্রে যোগ দেয়া লাখ লাখ নেতাকর্মীও। এরপরই মঞ্চে আসেন একাদশ জাতীয় নির্বাচনী প্রচারে যে গানটি সারাদেশের মানুষকে উদ্বেলিত করে তুলেছিল, সেই ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা’ গানের শিল্পীরা। এছাড়া বেলা সাড়ে ১২টা থেকেই মূল মঞ্চ থেকে দেশের জনপ্রিয় শিল্পীরা একাধারে নানা সাড়া জাগানিয়া গান পরিবেশন করে সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের মাতিয়ে রাখেন। সমাবেশে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলম, ফকির আলমগীর, জানে আলম, পথিক নবী, আঁখি আলমগীর, সালমরা গান গেয়ে শোনান। ব্যান্ড দল জলের গানও তাদের পরিবেশনা নিয়ে আসে এই উত্সবে।

শুরুতেই পবিত্র কোরআন, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে অভিনন্দনপত্র তুলে দেন তিনি। অভিনন্দন বার্তায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে গেয়েছেন জীবনের জয়গান। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে উড়িয়েছেন সৃষ্টির পতাকা। বাংলার বাতিঘর আপনাকে অভিবাদন।’ তিনি আরো বলেন, ‘সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজের জীবনকে উত্সর্গ করেছেন। আপনি জেগে থাকেন বলে বাংলাদেশ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নবাহক আপনি এই দেশমাতৃকাকে আপন সত্তায় ফিরিয়ে এনেছেন। আপনার প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বের গুণে কেবল জল স্থল নয়, অন্তরীক্ষেও আমাদের গৌরবময় বিচরণ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচয় দিয়ে আমরা আজ গর্ববোধ করি। শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা নন, আপনার উচ্চতা এখন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে।’

সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ সোনার বাংলা হবে, এ বিশ্বাস নিয়েই মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে। আমরা মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

তোফায়েল আহমদ বলেন, এই নির্বাচনে বাংলার মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করেছেন। সকলে মিলে এই বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের চরম শিখরে নিয়ে যাব, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, নতুন আলোর দিন উপহার দেওয়ার জন্য মানুষ এ বিজয় দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের নেত্রী নন, তিনি বাংলার ১৬ কোটি মানুষের নেত্রী। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির মহান নেত্রী। বঙ্গবন্ধুকন্যা যে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় ভূষিত হয়েছেন, বাংলার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আগামী পাঁচ বছর সফলতার সঙ্গে সরকার পরিচালনা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাবেক এ মন্ত্রী

সূত্র- ইত্তেফাক

ব্রেকিং নিউজ :
Shares