আসছে নতুন চমক,বি,এন,পির ৪১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ।


rafiq প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯, ০৭:৫৭ / ২৩৮
আসছে নতুন চমক,বি,এন,পির ৪১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ।

রফিক চৌধুরী প্রধান বার্তা সম্পাদক বিডি সংবাদএকাত্তর আজ ১ সেপ্টেম্বর। বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রায় ১৯ মাস ধরে কারাবন্দি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। দলের ওপর দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, অব্যাহত চাপ, শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ওপর অবর্ণনীয় হামলা, মামলা, গ্রেফতার, জুলুম-নির্যাতনের কারণে সাংগঠনিক দুর্বলতা, বেড়েছে মতানৈক্য। সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থতা, নির্বাচনে ভরাডুবি, নতুন-পুরনো জোটে অসন্তোষ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপরিপক্বতার কারণে বিএনপি অনেকটাই কোণঠাসা। প্রতিষ্ঠার পর বিএনপি এখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। এই অবস্থায় ৪১বছর পূর্ণ করে ৪২-এ পদার্পণ করেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বাণীতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের করালগ্রাস থেকে রক্ষার জন্য বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমান দুঃসময়েও জনগণকে সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। দেশ আজ দুঃশাসনকবলিত। মানুষ ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্যসঙ্গী। আইন, বিচার, প্রশাসনকে সরকার কব্জার মধ্যে রাখার চেষ্টায় মরিয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। খুনখারাবি, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ, সেখানে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা থাকতে পারে না। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করতে হবে।

রাজনীতি নিয়ে দেশের মানুষ যখন বিভ্রান্ত, তখন ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নতুন রাজনৈতিক দর্শন হাজির করেন। ১৯ দফা কর্মসূচি এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দর্শন নিয়ে আবির্ভূত হন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ইসলামী মূল্যবোধ, বিদেশী শক্তির আধিপত্যবাদ বিরোধী দর্শনে বিমুগ্ধ হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের অনুসারীরা এক মঞ্চে হাজির হন। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার পর ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেন গৃহবধূ থেকে দেশনেত্রীতে পরিণত হওয়া বেগম খালেদা জিয়া।

৪ বার ক্ষমতায় ও দুইবার বিরোধী দলে থাকা এই দলটি বিভিন্ন সময় নানা বাধাবিপত্তির মুখেও পড়েছে। তবে সংগঠনের বিস্তৃতি থেমে থাকেনি, বেড়েছে জনসমর্থনও। সরকারের দমন-পীড়নে নেতাকর্মীদের ওপর মিথ্যা মামলার হিড়িক ও গ্রেফতার, নিখোঁজ বা গুম ঘটনায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে।

বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৭৭ সালে জুন মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগো দল) গঠন করেন। ওই দলের আহ্বায়ক হয়েছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। এরপর জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করে জিয়াউর রহমান ওই বছরে প্রত্যক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জাগো দল, ন্যাপ (মশিউর রহমান যাদু মিয়া), ইউনাটেড পিপলস পার্টি (ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম-কর্নেল আকবর হোসেন), লেবার পার্টি (মতিন) ও মুসলিম লীগ (শাহ আজিজুর রহমান) নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়, যাতে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, শাহ আজিজুর রহমান, প্রফেসর ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এস এ বারী, ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল হালিম, জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদ-উল হক, ক্যাপ্টেন (অব.) নুরুল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত, এম সাইফুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মতিন, কর্নেল (অব.) আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, আতাউদ্দিন খান প্রমুখ নেতা ছিলেন।

১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়। দলের ১১ সদস্যের স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নের পরও সারাদেশেই বিএনপিকে উপড়ে ফেলতে পারেনি ক্ষমতাসীন শাসক দল। মানুষের মণিকোঠা থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম মুছে ফলতে পারেনি- এটাই বাস্তবতা। মাটি ও মানুষের রাজনীতিকে সামনে নিয়ে কালের পরিক্রমায় বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। জনগণের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। এরপর প্রায় ৯ বছর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে গৃহবধূ থেকে দেশনেত্রীতে পরিণত হন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি হন দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। এরপর আরও দুইবার নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তবে ১/১১-এর সেনাসমর্থিত সরকারের শাসনামল থেকে একটানা সাড়ে ১২ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলটি অংশ নিলেও ভূমিধস পরাজয় হয়। এরপর থেকেই দল পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিভিন্ন জেলা কমিটির সাথে সাথে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও আনছেন নতুন নেতৃত্ব। ড্যাবের পর ছাত্রদলেও নেতৃত্ব আসছে কাউন্সিলের মাধ্যমে। আগামীতে অন্য সংগঠনগুলোও কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করতে চান তিনি। এরপরই বিএনপির কাউন্সিল আয়োজন করা হবে বলে সিনিয়র নেতারা জানান।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে বলেন, ৫ জানুয়ারি ও ৩০ ডিসেম্বর তামাশার নির্বাচনের পর গণতন্ত্র এখন মৃতপ্রায়। দেশবিরোধী নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি নিয়ে হাহাকার চার দিকে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশজুড়ে গণহত্যা, গুম, গুপ্তহত্যা, নারী ও শিশুদের ওপর পৈশাচিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নিপীড়ন ও নির্যাতনের মহোৎসব চলছে। মানুষের প্রতিবাদী জাগরণকে চাপা দেয়ার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে বিএনপি যতটুকু কঠিন সময় পার করছে তার চেয়ে বেশি কঠিন সময় পার করছে জনগণ। জনগণের অবস্থা ভালো থাকলে বিএনপির অবস্থা খারাপ থাকার কথা নয়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির কর্মসূচি : বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী শেরেবাংলা নগরস্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এছাড়া একই দিন বেলা ৩টায় বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর রমনাস্থ ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখবেন। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল সোমবার বেলা ২টায় নয়াপল্টন থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করবে বিএনপি।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares