আজ চট্টগ্রাম যাচ্ছেন, “প্রধান মন্ত্রী”–কর্ণফুলী টানেলের নাম দিবেন “বঙ্গবন্ধু” শেখ মুজিবুর রহমান।


rafiq প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০১৯, ০৫:০৩ / ৩২২
আজ চট্টগ্রাম যাচ্ছেন, “প্রধান মন্ত্রী”–কর্ণফুলী টানেলের নাম  দিবেন “বঙ্গবন্ধু” শেখ মুজিবুর রহমান।

রফিক চৌধুরী —————-চট্টগ্রাম অঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেলের মূল খনন কাজ শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এ টানেলের নামকরণ করা হয়েছে। আজ রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রকল্পস্থলে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) দিয়ে মূল খননকাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। একই দিন তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দর নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত চার লেনের ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন। এরপর পতেঙ্গা সৈকতে এক সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন  বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি দুটি মেগাপ্রকল্পের উদ্বোধন ছাড়াও বিশাল এক সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন। সুধী সমাবেশের জন্য সৈকতে তৈরি করা হচ্ছে ৪৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৮ ফুট প্রস্থের নৌকা আকৃতির মঞ্চ। এর বাইরে অন্যকোন কর্মসূচি নেই বলেও জানান জেলা প্রশাসক। টানা তৃতীয় দফায় দায়িত্বগ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটাই প্রথম চট্টগ্রাম সফর। উপমহাদেশের প্রথম টানেল নির্মাণ প্রকল্পের বোরিং কার্যক্রম উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ঘিরে কর্ণফুলীর দুই তীরের বাসিন্দা ছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে ৩ হাজার ৫ মিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম টানেল। টানেলটি নেভাল একাডেমি পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে কাফকো ও সিইউএফএল পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে অপর প্রান্তে আনোয়ারায় যাবে। নদীর তলদেশে সর্বনিম্ন ৩৬ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ ফুট গভীরে স্থাপন করা হবে দুটি টিউব। নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে চার লেনের টানেলে চলবে যানবাহন। বর্তমানে কর্ণফুলীর উভয় পাড়ে পতেঙ্গা ও আনোয়ারায় প্রতিদিন এক-দেড় হাজার শ্রমিক, কারিগর পাইলিং ও বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক অবকাঠামো তৈরির কাজ করছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ  বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের সাড়ে ৩২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন মূল খনন কাজ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী কম্পিউটারের সাহায্যে বোরিং কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। খনন কাজের জন্য মূল যন্ত্র টিবিএম স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগেই টানেল মেগা প্রকল্পের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। আগামী ২০২২ সাল নাগাদ টানেল চালু হলে এই অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের দ্বার উম্মোচিত হবে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান আর পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের সম্প্রসারণ সহজতর হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড আর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে ব্যাপক বিনিয়োগ সেই সাথে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান হবে। চীনের সাংহাই শহরের মতো চট্টগ্রাম মহানগরীকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়ে তোলা সহজ হবে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিং। চায়না এক্সিম ব্যাংকের সিংহভাগ অর্থায়নে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ মেগাপ্রল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গতবছর জুলাই মাসে টানেল খননের মূল ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামবাহী (টানেল বোরিং মেশিন টিবিএম) চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। টানেল নির্মাণ মেগাপ্রকল্প ২০২২ সালে সম্পন্ন করার টার্গেট রেখেছে সেতু বিভাগ। এ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)।
টানেল নির্মাণে কারিগরি সমীক্ষা হয় ২০১৩ সালে। এরপর ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন বিশিষ্ট সড়ক টানেল নির্মাণ’ শীর্ষক মেগাপ্রকল্প সরকার অনুমোদন করে। ২০১৪ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে এ ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ২০১৫ সালের ৩০ জুন নির্মাতা চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি’র সাথে চুক্তি সই হয়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
প্রধানমন্ত্রী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন। তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এখন মূল ফাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে। যানজটে স্থবির নগরীর গতিশীলতা নিশ্চিত করতে মুরাদপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের মূলকাজ শুরু হয়েছে কাটগড় মোড় থেকে।
প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান দৈনিক ইনকিলাকে বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের কাজে আরও গতি আসবে। পুরোদমে কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেওয়ে নির্মাণ শেষ হলে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্পায়ন ও পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। এর সাথে কর্ণফুলীর টানেল এবং আউটার রিং রোড যুক্ত হবে। শুধু চট্টগ্রামেই নয়, দক্ষিণ চট্টগ্রাম  পটিয়া,থেকে শুরু করে কক্সবাজার পর্যন্ত এলাকার সার্বিক উন্নয়নেও এ প্রকল্প ভূমিকা রাখবে

ব্রেকিং নিউজ :
Shares