আওয়ামিলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনে নেমেছে


rafiq প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮, ২২:৪৮ / ২১২
আওয়ামিলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনে নেমেছে

রফিক চৌধুরী——–আওয়ামিলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনে নেমেছে। তাদের আদর্শহীনতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে! তারা কিসের লোভে স্বাধীনতবিরোধী, খুনি, দুর্নীতিবাজদের সাথে হাত মিলিয়েছে? অপরাধীদের উদ্ধার করতে নেমেছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে তিনি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ আহবান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সন্তানরা কী করে মনোনয়ন পেল? ঐক্যফ্রন্ট নেতারা তো দিকভ্রষ্ট, আদর্শহীন। তারা কখনও মানুষকে কিছু দিতে পারেনি এবং পারবে না। এদের কাছে দেশবাসীর চাওয়ারও কিছু নেই। মানুষ ভালো থাকলে তাদের ভালো লাগে না। এরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাস করে না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশে গত দশ বছরে ‘কল্পনাতীত স্বেচ্ছাচারিতার’ যে অভিযোগ করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, দশ বছরে আমরা যে পরিবর্তনটা এনেছি, সেই পরিবর্তনটা কারো কারো চোখে পড়ে না। যখন মানুষ ভালো থাকে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, তখন তারা বলে এটা নাকি স্বেচ্ছাচারিতা। স্বেচ্ছাচারিতা কী করে হলো? কী দেখতে পেল তারা?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেখলাম, তারা ঘোষণা করেছে- স্বেচ্ছাচারিতাকে নাকি পরিবর্তন করবে। এ পরিবর্তন কী জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, আবার সন্ত্রাস, আবার ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা, আবার নির্বাচনের নামে প্রহসন, দেশের সমস্ত উন্নয়ন ধ্বংস করে দিয়ে দেশকে সম্পূর্ণভাবে আবার অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া? এই পরিবর্তন তারা আনতে চান? তারা তো ছিল ক্ষমতায়। ৪৭ বছর তো দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই ৪৭ বছরের মধ্যে ২৭ বছর তো এরা ক্ষমতায় ছিল। কী দিয়েছিল মানুষকে? কী পেয়েছে মানুষ? মানুষ কিছু না পেলেও বিএনপি-জামায়াত জোটের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। যাদের কথা শুনেছি, ভাঙা স্যুটকেস ছাড়া কিছুই নাই, তারা কত সম্পদের মালিক। সম্পদ শুধু দেশে নয়, বিদেশে তাদের সম্পদের মালিকানার বিরাট হিসাব চলে আসছে। ঘুষ-দুর্নীতি করে তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ যখন এনেছিল, তখন আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি, কোন দুর্নীতি পায়নি বিশ্বব্যাংক। কানাডার ফেডারেল কোর্ট স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, বিশ্ব ব্যাংকের সব অভিযোগ ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা। বাংলাদেশের কোনো মানুষের মাথা হেঁট হোক- সেটা কখনো করিনি। বরং বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে গেলে সম্মান, মর্যাদা পাচ্ছে, সেইটুকু করতে সক্ষম হয়েছি। তাহলে স্বেচ্ছাচারিতা কোথায়?

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কী পরিবর্তন করে ফেলবে এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দিয়ে পরিবর্তন করবে? যারা এক হয়েছে তারা কারা? স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীরা কীভাবে নমিনেশন পায়, যারা বাংলাদেশই চায়নি। আমি আর কারো নাম নিতে চাই না। মনে হয়, যেন নামটাই নেওয়া উচিত না।

টানা দুই মেয়াদ সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যারা জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দেন, যুক্তি দেখান, বুদ্ধি দেন, বড় বড় কথা বলেন, আদর্শের বুলি আওড়ায়- আজ তাদের সব ধরনের উচ্চবাচ্য কোথায় হারিয়ে গিয়ে হাত মিলিয়েছে খুনিদের সাথে, দুর্নীতিবাজ অস্ত্র চোরাকারবারীদের সাথে। কীসের স্বার্থে কেন? আর এই দুর্নীতিবাজদের সাথে, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারীতে যারা সাজাপ্রাপ্ত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তাদের উদ্ধার করতে নেমেছে আমাদের কিছু জ্ঞানী-গুণী এবং স্বনামধন্য, যাকে আমরা বলি একবারে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী।

ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী কে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐক্যফ্রন্ট গঠন হয়েছে। তারা নাকি সরকার গঠন করবে। তো সরকারের প্রধান কে হবে সেটা কিন্তু আজ পর্যন্ত জাতির সামনে তারা দেখাতে পারেনি। এতিমের অর্থ আত্মসাত্কারী সে হবে? নাকি ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানের হত্যাকারী সাজাপ্রাপ্ত সে হবে? যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজা দিয়েছি তাদের কেউ হবে, সেটাও তো তারা স্পষ্ট করে জানায়নি। দেশবাসীকেও সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দেশবাসীকেও বেছে নিতে হবে তারা কাকে চায়? দেশের জনগণের ওপরই এ দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সফলতা তুলে ধরে বলেন, ১০ বছর আগে আমরা দিনবদলের সনদ দিয়েছিলাম। আজ মানুষের ঠিকই দিন বদলেছে। আজ যারা একেবারেই হতদরিদ্র ছিল তারাও দুমুঠো খেতে পারছে। যারা গৃহহারা তাদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। বিনা পয়সায় ওষুধ, বই দিচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি। উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছি। এছাড়া প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বিদ্যুত্ উত্পাদন বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মানুষের ভেতর পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। আমরা ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, উন্নয়নের ধারাকে যাতে কেউ ব্যাহত করতে না পারে সেজন্যই আওয়ামী লীগের আরো অন্তত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার প্রয়োজন রয়েছে। আগামী নির্বাচনে দেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে বলে বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, দেশের জনগণ কখনও ভুল করে না। তাদের সাংবিধানিক অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সে সাহসও পাবে না। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে? তিনি আরো বলেন, দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নেমে এসেছে। আগামী ৫ বছর ক্ষমতায় থাকলে দারিদ্র্য ৫/৬ ভাগে কমিয়ে আনতে সক্ষম হব। সেজন্যই দেশের সেবা করার জন্য আমাদের সরকারে থাকা একান্ত প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লেখক মুনতাসীর মামুন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজীত রায় নন্দী, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন

ব্রেকিং নিউজ :
Shares