(আইএমইডি)কে শক্তিশালী করার তাগিত-প্রধানমন্ত্রীর


rafiq প্রকাশের সময় : মার্চ ২০, ২০১৯, ০৪:৩৮ / ২৬০
(আইএমইডি)কে শক্তিশালী করার তাগিত-প্রধানমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার প্রকল্পের তদারকি নিশ্চিত করতে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) শক্তিশালী করাসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে ফসলী জমি বা জলাধার ব্যবহার না করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বর্তমান সরকারের প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশোধিত নতুন এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়। এতে পরিকল্পনামন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি), পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় নয় হাজার ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের সংশোধিত এডিপিরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্পের তদারকি নিশ্চিত করতে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে, আইএমইডির বিভাগীয় অফিস স্থাপন, জনবল ও যানবাহন বৃদ্ধি, কারিগরি প্রকল্পের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব গঠন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ফসলী জমি বা জলাধার ব্যবহার করা যাবে না। প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার তিন মাসের মধেই পিসিআর বা প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে প্রকল্পের গাড়ী, অফিস ও অন্যান্য সরঞ্জাম যথাস্থানে জমা দিতে হবে। প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশেই যারা অবসরে গিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে পরামর্শক নিয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে।
এছাড়া, প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে এবং একটি প্রকল্পের জন্য একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করতে হবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কারিগরি লোক পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে অনুমোদন সাপেক্ষে দুটি বা তার বেশি প্রকল্পে একজন পিডি থাকতে পারবেন। এনইসিতে আইএমইডি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ১৫টি সমস্যা তুলে ধরেছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, দেশজ সম্পদের লভ্যতা, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় এ সংশোধনী আনা হয়েছে। এনইসি সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আরও জানান, অনুমোদিত সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা ৫১ হাজার কোটি টাকা এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা করপোরেশনের নয় হাজার ৬২০ কোটি টাকার মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা আট হাজার ৯৬০ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা ৬৬০ কোটি টাকা। সুতরাং এক হাজার ৯১৬টি প্রকল্পের উন্নয়ন সহায়তাসহ সংশোধিত এডিপি’র আকার দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬২০ কোটি টাকায়।
উল্লেখ্য, অর্থবছরের শুরুতে এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, সংশোধিত এডিপিতে দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, আইসিটি’র উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সহায়ক প্রকল্প, সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক প্রকল্প ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) বাস্তবায়িত নতুন প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ অর্থবছর সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, মূল এডিপির আকার ছিল (স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার বরাদ্দ ছাড়া) এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। তা থেকে আট হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা অংশে বরাদ্দ ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫১ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্প সংখ্যা বাড়লো ৪৬৫ টি : সংশোধিত এডিপির আওতায় মোট প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯১৬টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৬২৯টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৫৪টি এবং জেডিসিএফ অর্থায়িত প্রকল্প ২টি এবং স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা/কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ১৩১টি প্রকল্প। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মূল এডিপিতে মোট প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৪৫১টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ২২৭টি, কারিগরি প্রকল্প ১১৭টি এবং জেডিসিএফ অর্থায়িত প্রকল্প ২টি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১০৫টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে বরাদ্দবিহীন সংযুক্ত অননুমোদিত নতুন প্রকল্প ৯৮৫টি। বৈদেশিক ঋণ প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প ২৫৬টি। পিপিপি প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭টি যা মূল এডিপিতে ছিল ৭৮টি।
সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্প: সংশোধিত এডিপিতে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪৫টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৩২৮টি এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৭টি। মূল এডিপিতে ৪৪৬টি প্রকল্প সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল। যার মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৪৩০টি ও কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৬টি।
বরাদ্দ: সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর অনুকুলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। এছাড়া, বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পেয়েছে ১৯ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এছাড়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় ৪২৯ কোটি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ১৬৩ কোটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৯৮৩ কোটি, তথ্য মন্ত্রণালয় ২৩১ কোটি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৯৮ কোটি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২০৫ কোটি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৩২১ কোটি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ১ হাজার ৭৪৫ কোটি, শিল্প মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮৭ কোটি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ৭১২ কোটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২ হাজার ১২৯ কোটি, কৃষি মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮০৬ কোটি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৭৭৫ কোটি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ৫২৪ কোটি, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬৩৪ কোটি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৫ হাজার ৮৫৯ কোটি, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৬৪৫ কোটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৯১৫ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৭ হাজার ৯২৫ কোটি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৮৯৪ কোটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২১ কোটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮৪৫ কোটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পাচ্ছে ৫৪১ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, সংশোধিত এডিপির সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন তথা দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares