অবশেষে আকাশ এর স্ত্রী মিতু গ্রেপ্তার


rafiq প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১, ২০১৯, ১১:৪৯ / ২৫৯
অবশেষে আকাশ এর  স্ত্রী মিতু গ্রেপ্তার

রফিক চৌধুরী————— মৃত্যুর  মাত্র দুই ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অভিমানী এক স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে নগরীর চান্দগাঁও থানার বি ব্লক ২নম্বর সড়কের নিজ বাসায় এ ঘটনা ঘটে। নিজের শরীর নিজেই ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করে আকাশ আত্মহত্যা করেন বলে জানান চিকিৎসকরা।

নিহত মোস্তফা মোরশেদ আকাশ চন্দনাইশ উপজেলার বাংলাবাজার বরকল এলাকার মৃত আব্দুস সবুরের ছেলে। বর্তমানে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার দুই নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সাথে থাকতেন। এদিকে গত রাত সোয়া ১১টার দিকে নিহত চিকিৎসক ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের স্ত্রীকে নগরীর নন্দনকানন এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় সিএমপি সদর দপ্তরে আজ সকাল ১১টায় এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হবে।
ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করে চমেক হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের এনেসথেসিয়া বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি কোচিং সেন্টার ‘থ্রি ডক্টরস’ এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পাশাপাশি শিক্ষকতাও করতেন । শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল।
চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভূঁইয়া জানান, ভোরে নিজ কক্ষের ওয়াশ রুমে ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজ শরীরে বিষ প্রয়োগ করেন আকাশ। পরে স্বজনরা হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আকাশের শরীরে অতিরিক্ত বিষ প্রয়োগের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আকাশ তার মৃত্যুর আগে ভোর রাত ৪টা ৫২ মিনিটে স্ত্রীর সাথে একটি ছবি শেয়ার করে ‘ভালো থেকো আমার ভালোবাসা তোমার প্রেমিকদের নিয়ে’ এক লাইনের সর্বশেষ স্ট্যাটাস দেন আকাশ। এর আগে ৪টা ২৬ মিনিটে স্ত্রীর আরও কিছু ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ছবি ও একটি ভিডিও শেয়ার করে স্ট্যাটাস দেন তিনি। স্ট্যাটাসের একপর্যায়ে স্ত্রীকে ‘চিটার’ উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে পরকিয়ার একাধিক তথ্যও তুলে ধরেন এবং অন্য পুরুষের সাথে কয়েকটি ছবিও শেয়ার করেন আকাশ।
পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর সাথে পরিচয় হয় আকাশের। এর পরে দুই জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে পারিবারিক ভাবে ২০১৬ সালে তাদের বিয়ে হয়। এর পর তাদের দাম্পত্যজীবন শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে ঝগড়া হতো দু’জনের। গতকাল রাতেও ঝগড়া হয় দুই জনের মধ্যে। রাত চারটার কিছু আগে মিতু তার বাবাকে ফোন দিলে তিনি গাড়ি নিয়ে এসে মিতুকে নিয়ে যান। এরপর আকাশ মনমরা হয়ে বাসার সোফায় বসে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর মোবাইল চালাতে চালাতে ওয়াশরুমে যান আকাশ। পরে তাকে পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার ডাকাডাকি করেন। এতে কোন সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে বাথরুমে তাকে পড়ে থাকতে দেখেন তারা। এসময় পাশেই কয়েকটি ইনজেকশনের সিরিঞ্জও পড়ে ছিল ।
ফেসবুকের দেয়া স্ট্যাটাসে জানা যায়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ২০০৯-২০১০ সেশনের ছাত্রী তানজিলা চৌধুরী মিতু ইন্টার্নশিপ করতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আসলে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে আকাশের। বিয়ের আগে বিভিন্ন ছেলের সাথে শারীরিক সর্ম্পক ছিল মিতুর। বিষয়টি আকাশ জানতে পারে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর। কিন্তু নিজের মান-সম্মানের কথা চিন্তুা করে আকাশ-মিতুকেই বিয়ে করেন। এরপরও মিতুর শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। বিয়ের পর এসব বিষয় নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হলে বিষয়টি নিয়ে আকাশের কাছে হাত-পা ধরে ক্ষমাও চান মিতু। এর পর দীর্ঘ এক বছর তাদের সংসার ভালভাবেই চলে। তবে কিছুদিন আগে মিতুর সাথে তার এক বন্ধুর কিছু অশ্লীল কথোপকথনের স্কিনশর্ট ও ছবি হাতে আসে আকাশের। এতেই ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
এদিকে নিজ ছেলেকে হারিয়ে বিচার চেয়ে মা জোবাইদা বিলাপ করে বলেন, ‘দিনের পর দিন আমার ছেলেকে মানসিক অত্যাচর করে আসছিল মিতু। আমার ছেলে মরেনি, তাকে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়েছে। আমি বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাকে দাফন করতে দিমু না। মিতুর মাও এর সাথে জড়িত, সে সবসময় মিতুকে কুমন্ত্রণা দিত, বিয়ের পর থেকে তাদের ঘরে অশান্তি। ওই মাইয়্যা (মিতু) অনেক ছেলের লগে সম্পর্ক ছিল। আমার আকাশ জেনেও বুকে কষ্ট নিয়ে ঘর করেছে। তারপরও বহু ছেলের সাথে সম্পর্ক করে মিতু। এত কিছুর পরও আমার ছেলের মরা মুখ দেখতে হল আমাকে। আমি এর বিচার চাই।’
নিহত আকাশের ছোট ভাই নেওয়াজ মোরশেদ বলেন, ‘গতকাল রাতে তাদের দুই জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে ভাবির (মিতু) বাবা আসলে উনার সাথে রাতেই বাপের বাড়ি চলে যান তিনি। ভাবির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হত। এসবের কারণেই ভাইয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নেন’।
এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলেও জানান আকাশের ছোট ভাই নেওয়াজ মোরশেদ। তবে রাত নয়টা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম। বলেন শরীরে বিষ প্রয়োগের কারণেই আকাশের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ করা হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করেই আকাশ আত্মহত্যা করেছে।

ব্রেকিং নিউজ :
Shares